বাবা নেই, অসুস্থ মা; মেয়েকে বিয়ে দিলো ‘মানবতায় বগাচতর’

জন্মের পরপরই হারান বাবা। শারীরিক অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ধরে বিছানায় কাতরাচ্ছে মা। অসহায় এ পরিবারের একমাত্র সন্তান তানজিলা আক্তার। পরিবারের অসচ্ছলতা ও করুণ এই পরিস্থিতির কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার সুযোগ হয়নি তার। ছোটবেলা থেকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার ও ভরণ-পোষণ জোগাতে নিজের মামার বাড়িতে থাকতেন এবং প্যারালাইজড্ মায়ের দেখাশোনা করতেন। মা-মামীর সংসারে তানজিলা যেন এক প্রকার বোঝা ছিল। একটু স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য স্কুল জীবন শেষ না করতেই সংসারের হাল ধরতেই বেছে নেন কর্মক্ষেত্র। কিন্তু এদিকে নিজেদের মেয়ের বিয়ে নিয়ে পুরো পরিবারের মাথায় যেন ছিল চিন্তার ভাঁজ। এ সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে তানজিলার বিয়ের দায়িত্ব নেয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবতায় বগাচতর।’

এতক্ষণ বলছিলাম পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলাধীন প্রত্যন্ত বগাচতর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড গাউসপুর এলাকার আবু তাহের-লতিফা বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে তানজিলার কথা।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) নিজ বাড়িতে ধুমধাম আয়োজনে একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী ফরেস্ট অফিস এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে আব্দুল হোসেন নয়নের সঙ্গে বিয়ে দেয় মানবতায় বগাচতর সংগঠনটি।

পুরো বিয়েকে স্মরণীয় করতে বাড়ি জুড়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা। আনন্দ-উল্লাসে মেতে তুলেন সকলকে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। খাবারের আয়োজন ছিল দেখার মতোই। সব মিলিয়ে একটি ধুমধাম বিয়ের আয়োজন ছিল।প

কান্না জড়িতকণ্ঠে কনের মামী বলেন, ‘আমরা আমাদের বোনের একমাত্র মেয়ের বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছিলাম। ওর বিয়ে দিতে একসময় সুদের ওপর টাকা নেয়ার চিন্তা করেছিলাম। পরে জানতে পারি মানবতার বগাচতর সংগঠনের কথা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। আমি দোয়া করি আল্লাহ ছেলেগুলোর ভালো করুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের বিয়ে নিয়ে এতটাই সমস্যায় পড়েছিলাম যে খাওয়া-দাওয়া ভুলে গিয়েছিলাম। তবে কখনও কল্পনা করতে পারিনি এত বড় আয়োজনে আমাদের অভাগা মেয়েটির বিয়ে হবে। এখন শুধু সবার কাছে দোয়া চাই যেন আমাদের মেয়ে ও তার জামাই সুখে শান্তিতে থাকে।

কথা হয় সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. নবী হোসেন, সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম ও শাহ আলমের সঙ্গে। তারা জানান, কয়েকদিন আগে পরিবারের পক্ষ থেকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যোগাযোগ করে আমাদের সঙ্গে। এরপর আমরা সকলে গিয়ে পরিবারটির খোঁজ-খবর নিই। পরিবারের সিদ্ধান্তে পাত্র ঠিক করা হলে আমরা প্রায় সত্তর হাজার টাকা খরচে দুইশত বরযাত্রীর খাবারের আয়োজন করে তাদের ধুমধামে বিয়ে দেই। এর আগেও আমরা বগাচতর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ক্যান্সার রোগী, অসুস্থ অসচ্ছল পরিবারসহ অসহায় দরিদ্র মানুষদের পাশে দাড়িয়েছি।

তারা আরও বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সব সময় চেষ্টা করি অসহায়, দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা দুর্যোগ-মহামারির সময় দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার যথাযথ চেষ্টা করি। আমাদের এই উদ্যোগ সামনের দিনেও অব্যাহত থাকবে।

বিয়ের অনুষ্ঠানে কথা হয় স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এলাকার লোকজন বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি তাদের সঙ্গে যুক্ত হই। আমি আমার পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করি যাতে তারা এই অসহায় মেয়েটির বিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে পারে। তারা সেই আয়োজনটি সম্পন্ন করতে পেরেছে। একটি পরিবারের মুখে হাসি ফুরিয়েছিল তারা।

মানবতার বগাচতর স্বেচ্ছাসেবী মানবিক এই সংগঠনের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছে পুরো উপজেলাবাসীলকে। সকলেই তাদের কাজে প্রশংসার ঢেকুর তুলছেন!

ব্যতিক্রমী এই বিয়ে অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন সংগঠনটির সদস্য মো. রাকিব, আক্তার হোসেন ও আলী আকবর, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শাখাওয়াত হোসেন খোকা, ইউপি সদস্য আব্দুল করিম হাওলাদার ও তৈয়ব আলী চৌধুরী প্রমুখ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।