ভারতের ঐতিহাসিক স্থান, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সফরে আল্লামা আব্দুল হাই নদভী

সমকালীল আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবস্থান করছেন রাহবারে বায়তুশ শরফ শায়খ আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (মা.জি.আ), পীর সাহেব বায়তুশ শরফ।

গত ৩০ জুলাই (রোববার) সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে ভারত সফরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন এই আলেমে দ্বীন। সফরকালে তিনি ভারতের বেশ কয়েকটি প্রদেশ পরিভ্রমণ করেছেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে আরও এক সপ্তাহ তিনি ভারতে অবস্থান করবেন।

ফুরফুরা দরবার শরীফ যেয়ারত
ভারত সফরের প্রথমদিনে (৩০ জুলাই) রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী হভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ফুরফুরা দরবার শরীফ যেয়ারতে যান। এসময় দরবারের পীরজাদাগণ রাহবারে বায়তুশ শরফকে উঞ্চ সংবর্ধনা ও আতিথেয়তা প্রদান করেন। এসময় ফুরফুরা দরবারের আলোচিত পীরজাদা ত্বহা ছিদ্দিকীকে নিজের লেখা বই উপহার দেন রাহবারে বায়তুশ শরফ।

ভারতের ঐতিহাসিক স্থান, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সফরে আল্লামা আব্দুল হাই নদভী 1
পীরজাদা ত্বহা ছিদ্দিকীকে নিজের লেখা বই উপহার দিচ্ছেন রাহবারে বায়তুশ শরফ

কলকাতা মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার মূল ক্যাম্পাস পরিদর্শন
সফরের দ্বিতীয় দিনে (৩১ জুলাই) রাহবারে বায়তুশ শরফ কালের সাক্ষী কলকাতা মাদ্রাসা-ই- আলীয়ার মূল ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি মাদ্রাসা ঘুরে দেখেন। পরে মাদ্রাসার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসির (রাহ.) মাজার যেয়ারত
মাদ্রাসা-ই- আলিয়া পরিদর্শন শেষে রাহবারে বায়তুশ শরফ বিকেলে কলকাতা মানিকতলায় ‘রাসুলনোমা’ হযরত শাহসুফি সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসি (১৮২০-১৮৮৬) (রাহ.) এর মাজার যেয়ারত করেন। হযরত শাহসুফি সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসি (রাহ.) ছিলেন রাসুল (সা.) প্রেমের এক জ্বলন্ত নিদর্শন। ফার্সি ভাষায় ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ নামক অনন্য অসাধারণ মহাকাব্য (কিতাব) রচনা করে অমর হয়ে আছেন একজন বাঙ্গালি ফার্সী মহাকবি হিসেবে। সাহিত্যিক গুরুত্ব বিচারে কাব্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সুফি সাধক ও ইসলাম প্রচারকের পৈতৃক বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার মল্লিক সোবহানে।

ভারতের ঐতিহাসিক স্থান, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সফরে আল্লামা আব্দুল হাই নদভী 2
কলকাতা আলীয়ার ওল্ড ক্যাম্পাসের এডমিনিস্ট্রেটর প্রফেসর ড. শামীম আখতর কাসেমীর সঙ্গে মতবিনিময়

লক্ষ্মৌতে অধ্যয়নকালীন দুই বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ
সফরের তৃতীয় দিন (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির হোটেলে বায়তুশ শরফের সাথে দেখা করতে আসেন লক্ষ্মৌতে অধ্যয়নকালীন বন্ধু আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী জায়েদ আহমদ নদভী ও নয়াদিল্লির ভারতীয় পার্লামেন্টে মসজিদের খতীব মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ নদভী। মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ নদভীর অনুরোধে রাহবারে বায়তুশ শরফ ২০১৮ সালে নয়াদিল্লির ভারতীয় পার্লামেন্টে মসজিদে নামাজের ইমামতি করেছিলেন।

হযরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীর (রাহ.) কবর যেয়ারত
সফরের তৃতীয় দিনে (১ আগস্ট) সকালে দিল্লির মেহেরুলীর মুসলিম কলোনি এলাকায় শায়িত বিশ্বখ্যাত আশেকে রাসুল, বহু অমূল্য গ্রন্থ ও কিতাবের রচয়িতা হযরত শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীর (রহ.) কবর যেয়ারত করেন।

শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহ.) ও ‘মাকবারাতুল মুহাদ্দিসীন’ যেয়ারত
সফরের চতুর্থ দিনে (২ আগস্ট) দুপুরে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ডেন্টাল সাইয়েন্স হসপিটালের বিপরীতে মেহেদীরানে রহিমিয়া মাদ্রাসা কম্পাউন্ডে ‘মাকবারাতুল মুহাদ্দিসীন’ এ পাশাপাশি শায়িত হযরত শাহ আবদুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহ.) (১৬৪৪-১৭১৯), শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহ.) (১৭০৩–১৭৬২) এবং শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহ.) (১৭৪৬-১৮২৪) এর মাজার যেয়ারত করেন রাহবারে বায়তুশ শরফ।

ভারতের ঐতিহাসিক স্থান, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সফরে আল্লামা আব্দুল হাই নদভী 3

ঐতিহাসিক আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন
সফরের চতুর্থ দিনে (২ আগস্ট) রাহবারে বায়তুশ শরফের সাথে নাদওয়াতুল ওলামা, লক্ষ্মৌতে অধ্যয়নকালীন বন্ধু আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী জায়েদ আহমদ নদভীর আমন্ত্রণে বিশ্ববিখ্যাত ‘আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’ ঘুরে দেখেন। পরে ড. কাজী জায়েদ নদভীর ক্যাম্পাসস্থ বাসায় আতিথেয়তা গ্রহণ করেন।

উস্তাদ মাওলানা মুহাম্মদ খালেদ ফয়সাল নদভীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
সফরের পঞ্চম দিনে (৩ আগস্ট) আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্মৌ এবং বিভিন্ন জেলা শহর, বেরেলি, রায় বেরেলি ও বানারসের জামেয়া সালাফিয়া পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পরে ভারতের উত্তর প্রদেশের বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নাদওয়াতুল ওলামা, লক্ষ্মৌতে অধ্যয়নকালীন রাহবারে বায়তুশ শরফের প্রিয় উস্তাদ শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ খালেদ ফয়সাল নদভী গাজীপুরীর সাথে নাদওয়াতুল ওলামা ক্যাম্পাস্থ বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ খালেদ ফয়সাল নদভী গাজীপুরী তাঁর লিখিত তিনটি কেতার উপহার দেন প্রিয় ছাত্র রাহবারে বায়তুশ শরফকে। রাহবারে বায়তুশ শরফও প্রিয় উস্তাদের হাতে নিজের লিখিত কিতাবাদি এবং বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া উপহার সামগ্রী তোলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাহবারে বায়তুশ শরফের নাদওয়ায় অধ্যয়নকালীন বন্ধু, লক্ষ্মৌর বিশিষ্ট সাংবাদিক জিয়াউল্লাহ নদভী, লক্ষ্মৌ ইন্টেগ্রাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. ছবি আহমদ নদভী, লক্ষৌর বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কমর উদ্দিন নদভী।

লক্ষ্মৌ ইউনিভার্সিটি ও ইন্টেগ্রাল ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন
সফরের ষষ্ঠদিনে (৪ আগস্ট) রাহাবারে বায়তুশ শরফ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লক্ষ্মৌ ইউনিভার্সিটি ও ইন্টেগ্রাল ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেন। পরে দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা মসজিদে জুমার নামাজ শেষ করে লক্ষ্মৌতে অধ্যয়নকালীন বন্ধু, লক্ষ্মৌ ইন্টেগ্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ছবি আহমদ নদভীর লক্ষ্মৌর বাসায় আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। পরে রাহবারের অপর বন্ধু লক্ষ্মৌর উর্দু পত্রিকা ‘কওমী তানজিম’ এর বিশিষ্ট সাংবাদিক জিয়াউল্লাহ নদভীর সাথে ‘নবাবী শহর’ হিসেবে খ্যাত লক্ষ্মৌর ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষায়াদি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

জীবন্ত কিংবদন্তি আল্লামা সাইয়েদ সালমান হোসাইনী নদভীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ
সফরের ষষ্ঠদিনে (৪ আগস্ট) রাতে রাহবারে বায়তুশ শরফ উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি ও প্রিয় উস্তাজদের অন্যতম আল্লামা সাইয়েদ সালমান হোসাইনী নদভীর সঙ্গে তাঁর লক্ষ্ণৌ শহরস্থ বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতকালে রাহবারে বায়তুশ শরফের মুখ থেকে বায়তুশ শরফের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে তিনি বারবার সন্তুষ্টির কথা ব্যক্ত করেন এবং কথার ফাঁকে ফাঁকে বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আবদুল জব্বার (রাহ.)-কে নিয়ে বারবার সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে আল্লাহ পাকের দরবারে তাঁর জন্য মাগফিরাত কামনা করেন।

সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে হযরত আল্লামা সাইয়েদ সালমান হোসাইনী নদভী তাঁর লিখিত বেশ কয়েকটি গ্রন্থ উপহার দেন প্রিয় ছাত্র রাহবারে বায়তুশ শরফ আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভীকে এবং এসব গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করার আহবান জানান। সবশেষে রাহবারে বায়তুশ শরফ প্রিয় উস্তাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া উপহার সামগ্রী তুলে দেন।

উপমহাদেশে বর্তমানে যে ক’জন বিশ্ববরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনে ইসলামী দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, শিক্ষা-সাংস্কৃতির দিক থেকে এ অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের অন্যতম হলেন আল্লামা সাইয়েদ সালমান হোসাই‌নী নদভী। তিনি আরবি এবং উর্দুতে অসংখ্য পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনার লেখক। তাঁর লিখিত নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকটি আরবী কিতাব মদীনা ইউনিভার্সিটি ও মিশর আল আজহার ইউনিভার্সিটির মতো নামকরা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবই। আরব বিশ্বে তিনিই বর্তমান সময়ে উপমহাদেশের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সুপরিচিত। দালীলিক, যুক্তিনির্ভর তাঁর জ্বালাময়ী ও অনলবর্ষী বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত ঝড় তুলছে।

মুম্বাইয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনা পরিদর্শন
সফরের অষ্টম দিনে (৬ আগস্ট) রাহবারে বায়তুশ শরফ দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা লক্ষ্ণৌতে অধ্যয়নকালীন বন্ধু, মুম্বাইয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকবর আনছারী নদভীকে সাথে নিয়ে মুম্বাইয়ের হাজী আলীর যেয়ারত, ঐতিহাসিক মিনার মসজিদ, ভারতীয় উপমহাদেশের কালের সাক্ষী হাজী ক্যাম্প, বিভিন্ন মাদ্রাসা ছাড়াও মুম্বাইয়ের সবচেয়ে বড় মনুমেন্ট গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া পরির্শন করেন।

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্গালোরোর উদ্দেশ্যে যাত্রা
মুম্বাইয়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন শেষে রাহবারে বায়তুশ শরফ ৬ আগস্ট চিকিৎসার জন্য ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ‘সিলিকন ভ্যালি’ ব্যাঙ্গালোরোতে আসেন। বর্তমানে সেখানে একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।