মাঘের শীতে পাহাড়ে পিঠা-পুলির পসরা

হ্রদ পাহাড়ে ঘেরা পার্বত্য জেলা রাঙামাটির এক অপরূপ সৌন্দর্যের জনপদ লংগদু। ঋতুতে ঋতুকে এই অঞ্চলে ধরা দেয় প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ। প্রকৃতির সাথে মানব মনেও আসে পরিবর্তন-নতুনত্ব। ঋতুতে ঋতুতে এখানকার মানুষ আয়োজন করেন হরেক রকমের আনন্দ-উৎসব। এই শীতেও কমতি নেই উৎসবের। জমকালো আয়োজনে এই পাহাড়ি গায়ে এবার অনুষ্ঠিত হলো পিঠা উৎসব। যা নজর কেড়েছে সকলের।

গতকাল শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার মাইনীমূখ ইউনিয়নের হাজাছড়া এলাকায় শীতকালীন ঐতিহ্যের দৃষ্টিনন্দন এ পিঠা উৎস আয়োজিত হয়। যেখানে স্থানীয় তরুণ-তরুণীর হাতের ছোঁয়ায় তৈরি মজাদার সব পিঠার সমারোহ দেখা গেছে।

সরজমিনে দেখা যায়, সবুজ প্রকৃতির মাঝে অনেকগুলো স্টল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে স্থান পেয়েছে বাহারি সব পিঠা। কেউবা পিঠা কিনছেন, কেউবা গরম গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে অবলোকন করছেন সৌন্দর্য। মায়েরা সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন হরেক রকমের পিঠার সাথে। আবার কেউ কেউ ছবি তুলে জমাচ্ছেন স্মৃতি।

মেলা ঘুরে আরও দেখা যায়, ১২টি স্টলে দুপুর থেকেই সারিবদ্ধ চুলায় গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারীরা তৈরী করছেন চিতই পিঠা, ভাঁপা পিঠা, কাটা পিঠা, বেণী পিঠা, কুসলিপিঠা, জামাই পিঠা, চন্দ্রহলি, বৌমুগ, পান, কুলি, পাটিসাপটাসহ অর্ধশতাধিক পিঠার সমারোহ একসঙ্গে নিয়ে চলেছে পিঠা খাওয়ার উৎসব।

জানা যায়, পৌষ আসলেই যেন পিঠার খাওয়ার ধুম পড়ে গ্রামে গ্রামে। শহুরে জীবনে যেন অনেকটা অপরিচিত এই দৃশ্য। তবে দুর্গম পাহাড়ের অন্যতম একখন্ড ভুমি লংগদুতে যেন এ এক ভিন্ন চিত্র। পৌষের শুরুতেই ঘরে ঘরে পিঠা তৈরি না করে পৌষ শেষে মাঘে এসে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা বলেন, পিঠা উৎসব একটি অন্যরকম আনন্দের মেলা। এই উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে হলে এরকম উৎসবের কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে কনকনে শীতে গরম গরম হরেক রকম পিঠার স্বাদ নিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নানা বয়সের হাজারো মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় পাহাড়ের এই পিঠা উৎসব।

পিঠা উৎসবে কথা হয় আল-আমিন ইমরান নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, পৌষ-পার্বণে বাঙ্গালীর ঘরে-ঘরে ও পাড়ায়-পাড়ায় পিঠা উৎসবের ধুম পড়ে। তাই এলাকাবাসীর উদ্যোগে ও সহযোগিতায় এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। আপাতত এ উৎসব শুধু হাজাছড়ায় হলেও ভবিষ্যতে এ পিঠা উৎসব আমরা উপজেলা সদরে করবো।

আয়োজক কমিটির উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যের এই পিঠা উৎসব এখন বিলুপ্তির পথে। এখন আর গ্রামে গঞ্জে আগের মত পিঠা তৈরী হয়না। বাচ্চারা এখন হাতের তৈরী পিঠার স্বাদ খুঁজে পায়না। ফলে ঐতিহ্যের পিঠা উৎসব আমার মনে বরাবরই দোলা দিয়ে যায়, তাই আমি চাই পিঠার কারিগর এবং পিঠার বাহারি স্বাদ সকলেই উপভোগ করুক।

এদিকে বিচারকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার, মাইনীমূখ ন্যাশনাল হাসপাতালের চিকিৎসক আল মামুন ও সাংবাদিক আরমান খান সাধারণ মানুষ ও কারিগরদের উৎসাহিত করতে পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণকারী ৩টি দোকানকে যাচাই বাছাই করে জুলেখা ফুড পয়েন্টকে প্রথম, জসিম পিঠা হাউজকে দ্বিতীয় ও ফারুক পিঠা হাউজকে তৃতীয় স্থান নির্বাচিত করে পুরস্কার প্রদান করেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।