মাস্টার প্ল্যানের বাইরে প্রকল্প নেয়ার ভুল স্বীকার করলো সিডিএ

নিজস্ব মাস্টার প্ল্যানের বাইরে চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করার ভুল স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। যা হইছে হইছে, সামনে সবার সাথে বসে মাস্টার প্ল্যানের আলোকে কাজ করা কথা জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ।

বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে সিডিএর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জলাবদ্ধতা নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এসময় সাংবাদিকরা চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে এতগুলো প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেওয়ার পরও জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী কেন মুক্তি পাচ্ছেন না জানতে চান।
জবাবে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, রাজাখালীতে পানি ওঠেনি। কারণ আমরা অস্থায়ী স্লুইজগেট লাগিয়েছি। স্থায়ী রেগুলেটগুলো বিদেশ থেকে এখনো আসেনি। মহেশখালে রেগুলেটর থাকা মা ও শিশু হাসপাতালেও পানি ওঠেনি।

তিনি আরও বলেন, যারা আমাদের সমালোচনা করেন তারা মূলত আমাদের সেনাবাহিনীকে অপমান করেন! আমাদের সেনাবাহিনীর একটা সুনাম আছে।

এরপর সাংবাদিকরা বলেন, তিন পার্বত্য জেলা এবং মিরসরাই-করেরহাট, ফটিকছড়ি-রামগড় এলাকায় শত শত কিলোমিটার সড়ক করেছে সেনাবাহিনী। কোথাও পাহাড় কাটেনি। সিডিএ বায়েজিদ লিংক রোড তৈরি করতে গিয়ে পাহাড় উজাড় করেছে, মাস্টার প্ল্যানের বাইরে গিয়ে জলাধারে আবাসিক এলাকা গড়েছে।
জবাবে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, যা হইছে হইছে, সামনে আমরা সবার সাথে বসবো। সাংবাদিকদের সাথেও বসবো। মাস্টার প্ল্যানের আলোকেই প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

আগামী অক্টোবরে বিমানবন্দর টু লালখানবাজার ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হচ্ছে এবং বাকলিয়া এক্সেস রোড এক সাথে উদ্বোধন হবে বলেও জানান দোভাষ।

সংবাদ সম্মেলনে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সেনাবাহিনীর পরামর্শ নেয়া হয়নি। প্রকল্প গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি হয়। চট্টগ্রাম নগরে প্রায় ৫৭টি খাল রয়েছে। তার মধ্যে ৩৬টি খালের সম্প্রসারণ চলছে। আমাদের ৩৬টি খালের মধ্যে ২৬টি খালের কাজ প্রায় শেষ। বাকি ১১টি খালের কাজ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে। ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলে আমরা কাজ শেষ করতে পারবো।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী আরও বলেন, নগরে জলাবদ্ধতা কমাতে হলে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া নগরের ১৬শ কিলোমিটার নালা রয়েছে। ডিপিপি অনুযায়ী আমারা ৩০২ কিলোমিটার নালার কাজ সম্পন্ন করেছি। বাকি ১৩শ কিলোমিটার সিটি করপোরশেনের হাতে আছে এবং আগের মতোই আছে।
পরিপূর্ণ জলাবদ্ধতামুক্ত হতে হলে সেই ১৩শ কিলোমিটার নালা পরিস্কার রাখতে হবে, ২১টি খাল পরিষ্কার রাখতে হবে। আমাদের প্রকল্পের অধীন কোনো খালের কারণে জলাবদ্ধতা হয়নি। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ তার বড় উদাহরণ।

এসময় সিডিএ বোর্ড মেম্বার জসিম উদ্দিন শাহ, ওমর ফারুক, স্থাপতি আশিক ইমরান, মোহাম্মদ আলী শাহ, অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সিডিএ’র মাস্টার প্ল্যানে যেসব জলাধার ছিল তার একাধিক জায়গায় স্বয়ং সিডিএ আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। এতে সমুদ্রে জোয়ারের সময় বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে মানুষের বাসা-বাড়ি ডুবাচ্ছে। আবার খাল-নালা নিয়মিত পরিস্কার না করায় মানুষের ভোগান্তিরও শেষ নেই।
অপর দিকে মাস্টার প্ল্যানে না থাকলেও বায়েজিদ লিংক রোড করে পাহাড় উজাড় করার দায়ে সিডিএ জরিমানা দিতে হয়েছে। আর এসবের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাস আগের কর্তকর্তাদের দায়ী করছেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।