রমজানে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

আজ ১৬ রমজান। ২০ রমজান সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে রোজাদারদের বিশেষ আমল ইতিকাফ। ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আবদ্ধ হয়ে থাকা। ইসলামের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশকে জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবাদতের নিয়তে মসজিদে (পুরুষ) কিংবা ঘরে (মহিলা) অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে। এর উদ্দেশ্য আল্লাহর আনুগত্য, সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের আকাক্সক্ষা, সওয়াব অর্জনের প্রত্যাশা এবং লাইলাতুল কদর লাভের আশা করা।

আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, নবী করিম (সা.) আজীবন রমজানের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর বিবিগণ ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)।

পবিত্র মাহে রমজানে জাগতিক ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে মসজিদে অবস্থান করা, সমর্পিত হৃদয়ে নিজের ক্ষমা ও মাগফিরাতের চেষ্টায় মশগুল হওয়া সৌভাগ্যের বিষয়। রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায় কেফায়া। অর্থাৎ মসজিদের অধিবাসীদের মধ্যে কেউ একজন পালন করলে, অন্যরা সওয়াব না পেলেও গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। তবে সুন্নত আদায়ের সওয়াব কেবল তারাই পাবেন, যারা ইতিকাফে বসবেন। সুন্নত ইতিকাফের সময় শুরু রমজানের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্ব থেকে। আর ঈদুল ফিতরের চাঁদ উঠলে সময় শেষ হয়।

রমজান মাসে ইতিকাফের বিশেষ উদ্দেশ্য হলো, শবেকদরের মহান রাত্রির ফজিলত পরিপূর্ণভাবে পেয়ে যাওয়া; কেননা শবেকদরের রাত সুনির্ধারিত নয়। বরং হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো একটিতে শবেকদর হয়ে থাকে। তাই শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে শবেকদর খোঁজার জন্য উত্তম একটি ব্যবস্থা হলো ইতিকাফ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত তালাশ কর।’ (সহিহুল বোখারি : ২০১৭)। সুতরাং পরিপূর্ণভাবে কদরের রাতের সৌভাগ্য অর্জন করতে হলে, রমজানের শেষ দশকে আমাকে আপনাকে রাত জাগরণ করতে হবে; যা ইতিকাফের মাধ্যমে করা অত্যন্ত সহজ ও বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লামা হাফিজ ইবনে রজব (রা.) বলেছেন, ইতিকাফের আসল উদ্দেশ্য সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম করা।

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-‘আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে [বায়তুল্লাহকে] পবিত্র কর তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা বাকারা/১২৫) উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জন জলীলুল কদর ও বড় মাপের নবীকে বায়তুল্লাহ পুন:নিমার্ণের পর পরই ইতিকাফকারীদের জন্য তা পবিত্র করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর দ্বারাই মূলত ইতিকাফের গুরুত্ব ও মহত্ব আন্দায করা যায়।

ইতিকাফকারীর জন্য রয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও পুরস্কার। যে ব্যক্তি একনিষ্ঠ মনে সওয়াবের নিয়তে ইতিকাফ করে, তার সব সগিরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ইতিকাফকারী ব্যক্তি যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকে আর ইতিকাফে লিপ্ত থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি বাইরের কোনো নেক কাজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকলেও ওই নেক কাজগুলোর পূর্ণ নেকি সে লাভ করবে।’ (ইবনে মাজা)। আরও বলেন, ‘ইতিকাফকারী মূলত গুনাহ থেকে দূরে থাকে এবং তাকে ইতিকাফের বিনিময়ে এত বেশি নেকি দেওয়া হবে, যেন সে সব নেকি অর্জনকারী।’ (ইবনে মাজা)। আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াব রয়েছে।’ (বায়হাকি)

ইতিকাফ মানুষকে দুনিয়ার ঝামেলা ত্যাগ করে নিবিষ্ট মনে ইবাদতের শিক্ষা দেয় এবং অল্প সময়ের জন্য হলেও আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক জুড়ে দেয়। এতে মানুষের পক্ষে অন্তিমকালে দুনিয়া ত্যাগ করা সহজ হয় এবং দুনিয়ার মহাব্বতের পরিবর্তে আল্লাহর মহাব্বত বৃদ্ধি পায়। ইতিকাফকারীর উদাহরণ সেই হাজতি ব্যক্তির মতো, যে কোনো মহান ব্যক্তির দরবারে হাত পেতে থাকে এবং বলে, যে পর্যন্ত না আমার হাজত পূর্ণ করা হয়, আমি এই দরবার ত্যাগ করব না।

অতএব আমাদের সবারই ইতিকাফের স্বাদ নেওয়া উচিত এবং এটিকে জীবনের মহামূল্য সুযোগ মনে করা উচিত। মনে রাখতে হবে, কোনো এলাকায় কেউ ইতিকাফে না বসলে সবাইকেই গুনাহগার হতে হবে। তাই আমাদের কর্তব্য, এখন থেকেই ইতিকাফের প্রস্তুতি নেওয়া, কোনো কারণে নিজে পারলেও অন্যকে ইতিকাফে বসার জন্য উৎসাহ দেওয়া এবং ইতিকাফকারীদের সাহায্য করা। আল্লাহ তাওফিক দিন। আমিন।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।