রমজানে দান-সদকার ফজিলত

ইসলামে দান-সদকা ও অন্যকে সহযোগিতার গুরুত্ব অনেক বেশি। আর রমজানে দানের গুরুত্ব আরও বেশি। এ মাসকে দানের মাস বলা হয়, কেননা এ মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজের সমান সওয়াব। আর একটি ফরজ ইবাদত করলে ৭০টি ফরজের সওয়াব দেওয়া হয়।

অনেক গরিব-দুঃখী আছেন, যারা সেহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খান। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তাদের দুঃখটা খানিক বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষকে ইফতার ও সেহরি করানোর মাধ্যমে অজস্র সওয়াব লাভ করতে বলেছেন বিশ্বনবী (স.)।

জায়েদ ইবনে খালেদ আলজুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন— ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে; তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না’ (সুনানে তিরমিজি: ৮০৭)।

যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের জন্য কোরআনে বলা হয়েছে— ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা হলো যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন বর্ধিত করে দেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: ২৬১)

সুরা তাওবায় এসেছে— ‘হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তাওবা: ১০৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কেয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন। (বুখারি: ৬৬০)

দান-সদকা সম্পদশালীদের ওপর দুর্বল আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি ও অন্যান্য অভাবগ্রস্তদের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রাপ্য ও অধিকার। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর আত্মীয়স্বজনকে দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবী ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপচয় করো না।’ -সূরা ইসরা: ২৬

আল্লাহতায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ -সূরা জারিয়াত: ১৯

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ -আল আদাবুল মুফরাদ

আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে; তারাই সফলকাম। মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এ আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৩৮-৩৯)।

দানশীল ব্যক্তিকে বলা হয় আল্লাহর বন্ধু। দান-সদকার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন,‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা ভালো, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও তা তোমাদের জন্য আরও ভালো এবং এতে তিনি তোমাদের জন্য কিছু পাপ মোচন করবেন। আর তোমরা যে আমল করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত।’ -সূরা বাকারা: ২৭১

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। -সূরা বাকারা: ২৭৪

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দানশীল, কল্যাণকামী ও মহান হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন সকলের একান্ত আপনজন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনোদিন কোনও সওয়ালকারীকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেননি। শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিমদের প্রতিও তার দান-অনুগ্রহ বিস্তৃত ছিল। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দানের হাত এতোটা প্রসারিত ছিল যে, আমার মনে হয়, সকাল বেলা যদি তার কাছে ওহুদ পরিমাণ সম্পদ রাখা হয়, তবে সন্ধ্যার আগেই তিনি সব দান করে দেবেন।’ –সহিহ বোখারি ও মুসসিম

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চেয়ে অধিক দয়ালু লোক দেখিনি।’-সহিহ মুসলিম

তাছাড়া দান-সদকা রিজিকে বরকত এনে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন— ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। ’ (সুরা ফাতির: ২৯-৩০)

কাজেই দান-সদকা ও অসহায়কে সহযোগিতা করার বিষয়টি সামর্থবান ও বিত্তশীলদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এতিম, মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, ভিক্ষুক, মুসাফির ও অসহায়দের প্রতিও তাদের দায়িত্ব অপরিসীম। অন্তত পবিত্র মাস রমজানে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা ও তাদের প্রাপ্য আদায় করা জরুরি।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।