রমজানে ধূমপান বর্জনের সুবর্ণ সুযোগ

ধূমপানে রোজা ভঙ্গ হয়। তাই রমজানে দিনের বেলায় বিশ্বাসী মুমিন রোজাদার ব্যক্তি ধূমপান করেন না। অনুরূপভাবে যাঁরা বিভিন্নভাবে তামাক সেবন করেন, তাঁরাও রোজা অবস্থায় তা করেন না। সুতরাং, ধূমপায়ী ও তামাকসেবীদের জন্য তা বর্জনের মহাসুযোগ। ধূমপানে বা তামাকে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা এগুলো সেবন ছাড়া দীর্ঘ সময় থাকতে পারেন না; কিন্তু পবিত্র রমজানে তাঁরা আল্লাহর রহমতে ও ইমানের বলে বলীয়ান হয়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা তা পরিহার করে থাকেন এবং রাতের বেলায় তা গ্রহণ করলেও সীমিত মাত্রায় গ্রহণ করেন। অনেকে এমনও আছেন, রমজানের চাঁদ থেকে ঈদের চাঁদ পর্যন্ত পূর্ণ এক মাস ধূমপান ও তামাক সম্পূর্ণ বর্জন করে থাকেন।

ধূমপান মৃত্যু ঘটায়। বিষয়টি জেনেও মানুষ নিজ হাতে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। জাতিসংঘের মাদকবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপানের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৫০ লাখ মানুষ মারা যায়। এর পরও মানুষ ধূমপান ছাড়তে রাজি নয়। আর রমজানে সিগারেট খাওয়া তো আর কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(তোমরা) নিজের হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)

এই আয়াতে সরাসরি ধূমপানের কথা উল্লেখ না থাকলেও ধূমপান এমন একটি কাজ, যার মাধ্যমে মানুষ নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন, ধূমপান করে সবাই তো আর মারা যায় না। হ্যাঁ, সব ধূমপায়ী ধূমপানের প্রথম পুরস্কার মৃত্যু উপহার না পেলেও এর পরের পুরস্কারগুলো ঠিকই পান।

ধূমপানের মাধ্যমে নিজ জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আর আত্মহত্যা ও নিজ জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া মারাত্মক হারাম ও একান্ত কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْمًا، وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ عُدْوَانًا وَّظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيْهِ نَارًا، وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرًا»
‘‘তোমরা নিজেদেরকে (যে কোন পন্থায়) হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল। যে ব্যক্তি সীমাতিক্রম ও অত্যাচার বশত এমন কান্ড করে বসবে তাহলে অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। আর এ কাজটা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষে একেবারেই সহজসাধ্য’’। (নিসা’ : ২৯-৩০)

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَيُحِلُّ لَـهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْـخَبَائِثَ»
‘‘আরো সে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের জন্য পবিত্র ও উত্তম বস্ত্তসমূহ হালাল করে দেন এবং হারাম করেন নিকৃষ্ট ও অপবিত্র বস্ত্তসমূহ’’।(আ’রাফ:১৫৭)

ধূমপানে সম্পদের বিশেষ অপচয় হয়। আর সম্পদের অপচয় তো হারাম।আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيْرًا، إِنَّ الْـمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْا إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ، وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْرًا»
‘‘কিছুতেই সম্পদের অপব্যয় করো না। কারণ, অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ’’।(ইস্রা/বানী ইস্রাঈল : ২৬-২৭)

ধূমপানের মাধ্যমে মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। কারণ, ধূমপায়ী যখন ধূমপান করে তখন তার আশপাশের অধূমপায়ীরা বিড়ি ও সিগারেটের ধোঁয়ায় কষ্ট পান।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَالَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ وَالْـمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوْا فَقَدِ احْتَمَلُوْا بُهْتَانًا وَّإِثْمًا مُّبِيْنًا»
‘‘যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরকে কষ্ট দেয় অথচ তারা কোন অপরাধ করেনি এ জাতীয় মানুষরা নিশ্চয়ই অপবাদ ও স্পষ্ট গুনাহ্’র বোঝা বহন করবে’’। (সূরা-আহযাব : ৫৭)

ধূমপান করে সরাসরি মসজিদে প্রবেশ করাটা হারাম কাজ। যেহেতু নবী (সা.) হাদিসের মধ্যে এরশাদ করেছেন যে, ‘যে এ দুটি জিনিস খেল, সে আমাদের মসজিদের কাছে আসবে না।’ একটা হলো কাঁচা পেঁয়াজ। আরেকটা হলো যেগুলোর মধ্যে গন্ধ আছে, রসুন জাতীয়, এর মধ্যে গন্ধ আছে। এই গন্ধযুক্ত জিনিস কেউ যদি খায় অথবা পান করে মসজিদে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তাঁর এ কাজটি হারাম।

সুতরাং নিজের ক্ষতি করার যেমন এখতিয়ার নেই, তেমনি অন্যের ক্ষতি করাও জায়েজ নয়। একজন ধূমপায়ী নিজের ক্ষতির পাশাপাশি আশপাশের অন্যদেরও ক্ষতি করে থাকে, যা সম্পূর্ণ হারাম ও কবিরা গুনাহ। যাঁরা ধূমপান করে বা তামাক সেবন করে, তাদের মুখে ও শরীরে একধরনের উৎকট বিশ্রী দুর্গন্ধ ছড়ায়; যা পাশের মানুষের কষ্টের কারণ হয় এবং তা হারাম ও নাজায়েজ।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।