রহমতের দশক শেষ হচ্ছে আজ

পবিত্র রমজানুল মোবারককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দশ দিন রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের আর তৃতীয় দশক নাজাতের। আজ রমজানের দশম দিন, রহমতের শেষ দিন। এ বছরের মতো ফুরিয়ে গেল রহমতের দশক। রমজানের বিশেষ ইবাদতে মুমিন বান্দা আল্লাহর রহমতে সিক্ত হয়ে মাগফিরাত অর্জন করে, জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ লাভ করে।

উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, একবার রমজানের কিছু পূর্বে একদিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করলেন, এ মাস অত্যন্ত বরকতের মাস। আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এ মাসে। রহমত বর্ষণ করেন ও গুনাহ মাফ করেন।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। বিভিন্ন উছিলায় বান্দাদের ক্ষমা করতেই চান তিনি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, এবং জেনে রাখ নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম সহনশীল (বাকারা : ২৩৫)।

রমজান মাসের মাঝের ১০ দিন যেহেতু মাগফিরাত বা ক্ষমার। সুতরাং এই ১০ দিন আমাদের করণীয় হবে আল্লাহ পাকের ক্ষমাসংক্রান্ত নামগুলো হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন এবং অধিকার করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা। আজীবন তার ধারক-বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তার সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেয়া।

আল্লাহ তায়ালার ক্ষমাসুলভ নামগুলো হলো আল গফিরু (ক্ষমাশীল), আল গফুরু (ক্ষমাময়), আল গফফারু (সর্বাধিক ক্ষমাকারী), আল আফুউ (মার্জনাকারী), আল খফিদু (বিনয় পছন্দকারী), আশ শাকুরু (কৃতজ্ঞ), আল বাররু (সদাচারী), আল হালিমু (সহিষ্ণু), আস সবুরু (ধৈর্যশীল), আত তাউওয়াবু (তওবা কবুলকারী) ইত্যাদি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অপরাধ স্বীকারকারী নিরপরাধ ব্যক্তির মতো।'(বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)। আপনি ক্ষমা লাভ করেছেন বা ক্ষমার অধিকারী হয়েছেন, তা বোঝা যাবে আপনার আচরণে যদি ক্ষমা প্রকাশিত হয়; নয়তো নয়।

অতএব, রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিন অর্থাৎ মাগফিরাতের ১০ দিন আমাদের করণীয় হলো সর্বোচ্চ ক্ষমা প্রদর্শন করা। মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, সকল মানুষ ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো যারা তওবাকারী।

তিনি আরো বলেন, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, ‘হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো।’ তিনি আবার ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।’

এ মাসে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করলে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, নিজে সব ধরনের খারাপ কাজ পরিহার করলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-ইস্তেগফার করলে, মহান আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার ওপর ভরসা করার এবং তার রহমত ও নৈকট্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।