লংগদুতে ইউপি সদস্য-হেডম্যানের বিরুদ্ধে জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার অদূরে গুলশাখালীর রাজনগর এলাকায় বাগান বাড়ি উচ্ছেদ করে এক ব্যবসায়ীর জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য গোলাম মাওলা ও হেডম্যান আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২ জনের নাম উল্লেখ করে লংগদু থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মো. আলী (৩৯)।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, লংগদু উপজেলার ৩ নম্বর গুলশাখালী ইউনিয়নের রাজনগর এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম মাওলা (৪০) এবং চৌমুহমী বাজারের মৃত নাজিম উদ্দীনের ছেলে ৩৮৬ নম্বর গুলশাখালী মৌজার হেডম্যান আব্দুল হালিম (৫৫)।

অভিযোগকারী মো. আলী থানার জিডির বরাতে জানান, বিগত ৬ বছর পূর্বে বড় ভাই রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে রেকর্ডীয় ৫ একর জায়গা ক্রয় করে এ পর্যন্ত ভোগ দখলে আছি। কিন্তু গোলাম মাওলা ওরফে মওলা মেম্বার আমার জায়গা ক্রয় এবং বর্গা নেওয়ার জন্যও আমাকে বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমার জায়গা আগে থেকেই জনৈক রানা মিয়াকে বর্গা দিয়ে রাখি। এজন্য মওলা মেম্বারকে জায়গা ক্রয় এবং বর্গা না দিলে তিনি আমাকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। এর কিছুদিন পর হেডম্যান হালিম আমার জায়গা ক্রয় করার প্রস্তাব দেয়। আমি বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেও আমাকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগী মো. আলী আরও জানান, হেডম্যান হালিম আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় যে, আমি যদি জায়গা বিক্রি না করি তাহলে আমাকে আমার জায়গায় যেতে দিবে না এবং আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে।

থানার সাধারণ ডায়েরির তথ্যমতে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি মওলা মেম্বার ও হেডম্যান হালিম উক্ত জায়গা রাতের বেলা অগোচরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৫শটি গাছ কেটে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তারা ফলের বাগান নষ্ট করে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য গোলাম মাওলা বলেন, জমি দখলচেষ্টার প্রশ্নই ওঠে না। আমি তো মো. আলীকে চিনিই না! এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে ওই জমি যিনি নিজের দাবি করছেন, তার কাগজপত্র থাকলে তিনি দেখাবেন।

তিনি আরও বলেন, এ জায়গার মালিক হেডম্যান হালিম। অযথাই আমার নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

জানতে চাইরে ৩৮৬ নম্বর গুলশাখালী মৌজার হেডম্যান আব্দুল হালিম বলেন, মো. আলী যে ৫ একর জায়গা তার বলে দাবি করছে সেটা মূলত কার তা কাগজপত্র দেখে বলতে পারবো। তবে আমার জানা মতে ঐ জায়গার পাশেই মো. আলীর ২০ একর জায়গা ছিল যা ৩৭ রাজনগর বিজিবি জোন অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। সঠিক দলিলাদি নিয়ে আসলে তাকে সহযোগিতা করবো। তবে আমি তার জায়গা দখল করি নাই। সে কেন এমন অভিযোগ করেছে তা আমার জানা নাই।

সরজমিনে গেলে স্থানীয় প্রতিবেশীরা এবং ঐ জায়গায় কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে মো. আলীর বাগান বাড়ি বলেই আমরা জানি। তবে এখন মওলা মেম্বারের নেতৃত্বই গাছ কাটা ও জমি পরিস্কার করার কাজ চলছে বলে জানান।

ভুক্তভোগী মো. আলীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, সম্প্রতি হেডম্যান ও মওলা মেম্বার মিলে এ জায়গা প্রথমে ১৪ লাখ, পরে ১৬ লাখ এবং সর্বশেষ ১৮ লাখ টাকায় কিনতে চেয়েছেন। জমি বিক্রি না করার কারণে মূলত তারা একটি অসাধু চক্রের যোগসাজশে জমি দখলের চেষ্টা করছেন।

লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমি দখল ও হুমকির বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ঐ জমি পরিদর্শন করা হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।