শীতার্তদের মুখে হাসি ফোটালো ‘অনির্বাণ’

“এখন তো দেশে সব জিনিসের দাম অনেক বেশি। এ বছর শীতও পড়ছে অনেক। শীতের কাপড় বা কম্বল কেনার মতো সেই টাকাও ছিলো না। তাই এতদিন পুরাতন কাপড়ে বানানো কাঁথা দিয়ে রাত কাটাতে হতো। রাত বাড়লে অনেক শীত লাগতো। তবে এবার কলেজের কিছু শিক্ষার্থী কম্বল দিয়ে গেছে। সেটা দিয়ে এখন এখন ভালোভাবেই শীত নিবারণ হচ্ছে।”

নিজের ভাষায় হাসিমাখা মুখে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের নুরজাহান বেগম (রুপা) নামে এক নারী। তার মতো হাসিমুখ বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া প্রায় ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমেনা খাতুন, রাস্তার ধারে ধারে ঘুরে বেড়ানো রফিকুল ইসলাম, পেয়ারী বেগম এবং পথশিশু আক্কাসের মতো আরও অনেকের। পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে এক টুকরো কম্বল যেন তদের কাছে সোনার চেয়ে দামী।

গত প্রায় ২ সপ্তাহের বেশে সময় ধরে এভাবে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অনির্বাণ’। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পথে পথে কয়েকশ মানুষের মাঝে কয়েক দফায় শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে সংগঠনটি। এছাড়া জোরারগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং ফেনীর রেলস্টেশনেও পৃথকভাবে কম্বল বিতরণ করেন তারা।

জানা গেছে, অনিবার্ণের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবছর ক্যাম্পাসের কিছু প্রাণোচ্ছ্বল শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয় কার্যকরী কমিটি। তারই প্রেক্ষিতে এবারের নতুন কার্যকরী কমিটি ২০২৩-২৪ সেশন প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গরীব, দুস্থ, মেহনতী মানুষদের পাশে দাড়ায় শীতবস্ত্র নিয়ে। এই শীতে কত মানুষজন একটা গরম কাপড়ের অভাবে রাস্তাঘাটে, টিনের চালে কিংবা বাঁশের ছাউনীর ঘরে ঠান্ডায় দিনাতিপাত করে। সেই অবহেলিত মানুষজনের কষ্ট লাঘব করার নিমিত্তে অনির্বাণের একঝাঁক তরুণ কনকনে শীতের রাতে হাঁট-বাজার আর পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে খুঁজে বের করে সেই সকল মানুষদের যারা প্রকৃত অর্থে সুবিধাবঞ্চিত। অনির্বাণের হাত ধরে আগের মতো এবার তিন
ধাপে শীতবস্ত্র বিতরণ সম্পন্ন হয়।

অনির্বাণের ২০২৩-২৪ সেশনের সাধারণ সম্পাদক জনি দেবনাথ বলেন, কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় অসহায় দরিদ্র মানুষের কষ্টের সীমা থাকেনা। হতদরিদ্র এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে অনিবার্ণের প্রতিটি সদস্য ও খুবই আনন্দিত। মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া সংগঠনের প্রতিটি সদস্যকে উৎসাহিত করে দুঃস্থ মানুষের জন্য ক্রমাগত কাজ করার। ভবিষ্যতে আরও অধিক সংখ্যক মানুষের নিকট সাহায্য নিয়ে পৌঁছে যেতে চাই আমরা।

সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রহমান আদনান বলেন, সকলের স্বতঃস্ফূর্ত প্রচেষ্টায় আমাদের উষ্ণ ভালোবাসা ছড়িয়ে যাবে সকল সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে। তাদের এই শীত উষ্ণ হোক সকলের ভালোবাসায়। সবাই মিলে একসাথে নিজেকে নিয়োজিত করি মানুষের কল্যাণে। তাতেই পরিবর্তিত হবে দৃষ্টিভঙ্গি আর পরিবর্তন হবে সমাজ তথা রাষ্ট্রের ৷ তাই আসুন সমস্বরে বলে উঠি—‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।’

শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সংগঠনটির সদস্যরা ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন—অনির্বাণের অন্যতম উপদেষ্টা শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান,সাঈদ মাহবুব আকন্দসহ কলেজের শিক্ষকগণ।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের মার্চ মাসে কিছু প্রাণবন্ত ও উদ্যমী শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গড়ে উঠে সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে দায়বদ্ধ ও আত্মমানবতার সেবায় নিয়োজিত সংগঠন ‘অনির্বাণ’। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মো. ইসমাইল মোল্লা এবং প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী আজম রোকন।

সমাজের দুস্থ, অসহায়, গরীব,অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ‘অনির্বাণ’ শুরু থেকে এক যুগ অবধি করেছে অসংখ্য কর্মকাণ্ড। এরমধ্যে রয়েছে—বিনামূল্যে রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ শনাক্তকরণ; দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ; বার্ষিক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি; রমজান মাসে গরীব, দুস্থ মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ; শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণসহ আরও অনেক মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ড।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।