শোকজ নোটিশের জবাব দিলেন চবির ডিন

গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের সমালোচনা, কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। যেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন, পুরো কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি এবং শিক্ষক নিয়োগসহ সবকিছুতে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে কিছু প্রমাণ সংযুক্ত করেন। তবে ডিন আদতে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি বরং স্ববিরোধী বক্তব্যই দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন চবি রেজিস্ট্রার ভারপ্রাপ্ত এস এম মনিরুল হাসান।

রোববার (২০ নভেম্বর) প্রমাণসহ চিঠির জবাব দেন তিনি। চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। এর আগে গত ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার ( ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। চিঠিতে ৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে প্রমাণসহ ব্যাখ্যা প্রদানের কথা বলা হলেও ছুটিতে থাকায় ৮ নভেম্বর চিঠি হাতে পান অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। পরে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকালে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) বরাবর চিঠি দিয়ে সাত কর্মদিবসের সময় চেয়েছেন তিনি।

কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী লিখেন, কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিতে জড়িতের প্রমাণ দিতে আমি বাধ্য নই, কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিতে জড়িত নয় এটি প্রমাণের দায়িত্ব তাদের উপরই বর্তায়। কেবল মহামান্য আদালতের চাহিদা অনুযায়ী এসব তথ্য সরবরাহ করা যুক্তিযুক্ত বলে আমি মনে করি।

১৭ পৃষ্ঠার তিন ভাগে বিভক্ত জবাবে আরও যা আছে

চিঠিতে “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন” এ বক্তব্যের ব্যাখ্যায় অধ্যাপক নিজামী দাবি করেন, উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে অদ্যাবধি প্রায় তিন (৩) বছর তিনি The Chittagong University Act, 1973 এর section 63 (p. 31 ) -এ বর্ণিত বিষয়টি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেননি। বরং বিশ্ববিদ্যালের আইন লংঘন করে চলেছেন। এক্ষেত্রে সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন, সিনিটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন, সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন এবং সিন্ডিকেটে সিনেট প্রতিনিধি নির্বাচন। উল্ল্যেখযোগ্য। আইনের শাসনে বিশ্বাসী কেউ এমনটি করতে পারেন না।

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অন্যান্য দাবির সাথে সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সর্বক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩-এর অনুসরণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে উপাচার্যকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, উপাচার্য আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে শিক্ষক সমিতির আল্টিমেটামের প্রয়োজন হতো না। বিষয়টি এতটা হাস্যকর যে আইনের শাসন পরিপালনে উপাচার্য ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছি- কিনা আমি, কেবল তাঁকে আইনের শাসনের প্রতি তাঁর অনীহার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্যে।

ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গায়েবের সাথে জড়িত উপাচার্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কমচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সিন্ডিকেটে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তের ৪ মাস ১০ দিন পরও অন্যত্র বদলি না করে উপাচার্য দুর্নীতির সাথে জড়িতদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুরক্ষা প্রদান করে চলেছেন। এটি আইনের শাসনের অন্তরায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত ৫টি ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় জড়িত যে চক্রটি অর্থের বিনিময়ে চাকুরি দেয়ার লোভ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে লিপ্ত- সে চক্রটিকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে সিন্ডিকেট তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ফৌজদারি মামলা দায়ের না করার অর্থই হলো বিশ্ববিদ্যালয়কে দুষ্ট চক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত করা। এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আইনের শাসন প্রতিপালনে অনীহার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন প্রকৌশলী ও একজন সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাঁদেরকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দরপত্র আহ্বান কমিটিতে সদস্য হিসেবে রেখেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ যেন শাস্তির বদলে পুরস্কারই পাচ্ছেন তাঁরা।

“পুরো কর্তৃপক্ষ দুর্নীতিতে জড়িত” এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, উপাচার্যের জন্য নির্ধারিত “বাংলো”-এর মেরামত, সংস্কার, সিকিউরিটি গার্ড, বাবুর্চী, মালী প্রত্যেকের বেতন ভাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিশোধ করা হয় এবং তিনি নিজেও বাংলোতে অবস্থান করেন। এতদসত্ত্বেও, তিনি তাঁর শহরের বাসায় অবস্থান দেখিয়ে মাসিক বেতনের সাথে বাড়ী ভাড়া ভাতা, বিদ্যুৎ বিল ও সার্ভিস চার্জ নিচ্ছেন।

উপাচার্যের মৌখিক নির্দেশে চলতি বছর ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বসবাসকারী দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আর্থিক সাহায্য দানের নিমিত্ত রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর নামে ১,৭০,০০০/- (এক লক্ষ সত্তর হাজার) টাকার একটি চেক গত ২৮.০৮.২০২২ তারিখ ইস্যু করা হয়। রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ঈদের পূর্বে কোন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে, কোন উৎস হতে এ পরিমাণ টাকা অনুদান দিয়েছেন -যা ব্যয়িত হয়েছে বলে রেজিষ্টার দপ্তরের নোটে উল্লেখ আছে তা স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশ করা জরুরী।

এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে করোনাভাইরাসের (Covid 19) কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত পুরো সময় বন্ধ ছিল। ফলে সশরীরে শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ থাকে। বন্ধ ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলসমূহ। কিন্তু এ অর্থ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় দেখিয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্পূর্ণ সচল থাকা অবস্থায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতের বিল ছিলো ৫ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বিদ্যুৎ বিল ছিলো ৪ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। অতএব, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের প্রকৃত বিদ্যুৎ বিলের তথ্য-উপাত্ত এবং এ খাতে ব্যয়িত অর্থের পরিমান জানা দরকার।

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। তবু বন্ধ ক্যাম্পাসে আপ্যায়ন বাবদ ৩৭ লাখ টাকা খরচের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের বহনকারী শাটল ট্রেন বন্ধ থাকলেও ভাড়া বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২০ লাখ টাকা। আর বন্ধ আবাসিক হলগুলোর বাল্ব ও লাইট কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ হয়েছে সাত লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের গাড়ীর অপব্যবহার এবং জ্বালানীর অপচয় নিয়ে ইতোপূর্বে বহু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট রেজিষ্ট্রার দপ্তরে জমা পড়ে আছে। ক্ষেত্র বিশেষে এসব প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী গাড়ীর লগবুক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ ছাড়া অন্য কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়ে না।

২০২১-২০২২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণীতে D ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার দিন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিলেন না, তিনি ছুটিতে ঢাকায় ছিলেন। অথচ তিনি ভর্তি পরীক্ষার দিনের সকাল বিকাল দুই শিফটের পরীক্ষার হল পরিদর্শন সংক্রান্ত কাজে ” সম্মানির” অর্থ গ্রহণের জন্যে তৈরি ভাউচার স্বয়ং স্বাক্ষরপূর্বক হিসাব নিয়ামক দপ্তরে জমা দেন। বিস্ময়করভাবে আইন অনুষদের ডিন ও সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধান যথারীতি এটি অনুমোদন করেন (পরিশিষ্ট-৩১)। এ মাত্রার আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই।

উপাচার্য উপরোক্ত অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে থেমে থাকেননি। তিনি গত ৩০.০৮.২০২২ তারিখ ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন এবং ৩১.০৮.২০২২ তারিখ ভারতে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। অথচ উপাচার্য একই শিক্ষাবর্ষে (২০২১-২০২২) D1 উপ-ইউনিট প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ৩১.০৮.২০২২ তারিখ অনুষ্ঠিত সকাল-বিকাল দুই শিফটের ব্যবহারিক ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিদর্শন বাবদ অর্থ গ্রহণের দু’টো ভাউচার স্বীয় স্বাক্ষরপূর্বক হিসাব বিভাগে জমা দেন। পূর্বের ন্যায় ডিন, আইন অনুষদ বিল দু’টো ফরোয়ার্ড করেন।

উপাচার্য ০১.০৯.২০২২ তারিখ পূর্বসূচি অনুযায়ী ভারতে অবস্থান করবার কথা। কিন্তু ০১.০৯.২০২২ তারিখ অনুষ্ঠিত একই ইউনিটের (D1 উপ- ইউনিট) ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের সকাল-বিকাল দুই শিফটের ব্যবহারিক ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম পরিদর্শন বাবদ অর্থ গ্রহণের দু’টো ভাউচার স্বাক্ষরপূর্বক বিল হিসাব শাখায় জমা দেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধান ও আইন অনুষদের ডিন -এই অনৈতিক কাজটি অনুমোদন করেন। অনুমান করা যায় উপাচার্য বিদেশ যাওয়ার আগে অথবা বিদেশ থেকে এসে নীতিবিগর্হিত এ কর্মটি সম্পাদন করেন।

“শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই অনিয়ম হচ্ছে” এই বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫৩৭তম সভার সিদ্ধান্ত -৩৭ (২২) অনুসারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তা খুঁজে বের করে অনিয়মের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা ও নিয়োগ সম্পর্কিত সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন পেশ করা হয়।

প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী স্বয়ং উপাচার্যের তৎকালীন একান্ত সহকারী জনাব খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন এবং জনাব আহমদ হোসেন (প্রহরী)-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অডিও ক্লিপ ফাঁস এবং নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে উক্ত বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ।

সম্প্রতি শিক্ষক সমিতির এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগদানের ব্যাপারে সিন্ডিকেটের ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে গত ১৪, ১০, ২০২২ তারিখ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে। বিশ্ববিদ্যালের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে এসব বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্যে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সমিতির উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের চরম লংঘনও বটে।

সংগীত বিভাগে প্রায় দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সিলেকশন বোর্ডের সভা আহ্বান না করে উপাচার্য আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। জনশ্রুতি আছে যে, উপাচার্য সংগীত বিভাগের সভাপতির পদ আঁকড়ে থাকতে শিক্ষক পদোন্নতির সভা আহ্ববান প্রলম্বিত করেন।

শুদ্ধাচার চর্চার মূলকথা হলো দূর্নীতির অপসারণ বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগকে এক সিন্ডিকেট সভায় (৫৩৮ তম সিন্ডিকেট) সর্বসম্মতিক্রমে শুদ্ধাচার পরিপন্থি বলে উক্ত নিয়োগ বাতিল করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো আইন, বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় (৫৩৯তম সিন্ডিকেট) ১৭ জনকে বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগ প্রদান কেবল দুর্নীতি নয়, দুর্নীতির সাথে সহবস্থানের নামান্তর ।

বক্তব্যে হেলাল উদ্দিন নিজামী আরও বলেন, উপরোক্ত বর্ণনামতে (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশ) পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে আমার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে রেজিষ্ট্রার দপ্তরের চিঠিতে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। কারণ আমি মনে করি আইনের শাসন লঙ্ঘনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে আড়স্ট থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগে অনিয়ম প্রশ্রয় পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব অন্যায়ের বিষয়ে নীরব থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি সুরক্ষিত থাকে না; বরং অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উদ্ধারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এছাড়া, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে আমার মন্তব্য উপাচার্যের “মানহানির সামিল”- যে কথাটি বলা হয়েছে, তা- ” আপেক্ষিক ও বায়বীয়”। ব্যক্তি, স্থান, কাল এবং পাত্রভেদে এর পারসেপশন (perception) ভিন্ন হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

অতএব, আমি আশা করবো কিছুসংখ্যক উপাচার্য- যাঁদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে- তাঁরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়, দেশ ও জাতির স্বার্থে নিজ-নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হবেন।

অধ্যাপক ড. হেলাল নিজামীর পাঠানো ব্যাখ্যা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান।

তিনি বলেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অতিরিক্ত সময় নিয়েও আদতে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি; ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথমত উনি উত্তর দেবার জন্য ৩ দিনের জায়গায় ১০দিন সময় নিয়েছেন। এখন বলছেন উনি প্রমাণ দিতে বাধ্য নন। উনি বস্তুত কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। দুর্নীতির কোন প্রমাণ নেই বলেই বিভিন্ন মিমাংশিত বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যার প্রমাণ প্রশাসন হাতে আছে। উনি মূলত স্ববিরোধী বক্তব্যই দিয়েছেন।
ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় উপাচার্য মহোদয়ের সম্মানী সম্পর্কে উনি যা বলেছেন তা মনগড়া। বিনা অনুমতিতে গোপন অডিও রেকর্ড করা যেহেতু শাস্তি যোগ্য অপরাধ, তাই ডিনদের মিটিংয়ে বিনা অনুমতিতে গোপনে অডিও রেকর্ডের বিষয়টি ধামাচাপা দেবার জন্য উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে বিভিন্ন মিমাংশিত বিষয় নিয়ে এসেছেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট। ১৬ সদস্যের এ পর্ষদের ৮ পদই খালি। আর মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্য আছেন আরও দু’জন। সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরির পদে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১২ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর। দুই বছর পর পর এ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আট বছর ধরে এ নির্বাচন হচ্ছে না।

সর্বশেষ গত ১২ অক্টোবর সিন্ডিকেটে ডিন ক্যাটাগরির নির্বাচন চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ৮ অনুষদের ডিন। কিন্তু চিঠি দেওয়ার ২২ দিন পরও নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় গত বৃহস্পতিবার এক সভায় এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে জানতে চান ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী। এ সময় উপাচার্য তার চেয়ার ছেড়ে উঠে ডিনকে শাসাতে থাকেন এবং নির্বাচন দেবেন না বলে জানান। আর এই নিয়ে দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।