সংঘর্ষের পেছনে চবি শিক্ষক সমিতিকে দায়ী উপাচার্যের, পাল্টা জবাব শিক্ষক সমিতির

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পেছনে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনকে দায়ী করেছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। এবার পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এসব সংঘর্ষের জন্য প্রশাসনকে দুষছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।

চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, আপনি চার বছর ধরে আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দিচ্ছেন না। হলের উদ্বোধন না হতেও আপনি প্রভোস্ট নিয়োগ দিয়ে মধু খাওয়াচ্ছেন। আপনি এসব হলগুলোতে বৈধ ছাত্রদেরকে আসন দিচ্ছেন না কারণ আপনার অনেক অবৈধ লোকজনকে এসব হলে রাখতে হচ্ছে। তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। তারা এ একটি ছাত্র সংগঠনের অধীনে এ ধরণের সংঘর্ষগুলোতে জড়িত হচ্ছে।

তিনি বলেন, তাদেরকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন সে দায়টা স্বীকার না করে এবং সে সংগঠনটির নাম পর্যন্ত না নিয়ে উলটো একবার সাধারণ ছাত্রদের উপর আরেকবার শিক্ষক সমিতির উপর দায় চাপাচ্ছেন। আপনার এ ধরণের নতজানু ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিতে থাকলে এ বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই কোথায় গিয়ে পৌছাবে এ কথা কেউ বলতে পারবে না।

এ ধরণের বক্তব্য কেবল হাস্যকর নয় বরং চরম অসংলগ্ন ও ভারসাম্যহীন যার মধ্য দিয়ে তাদের তীব্র মনোবৈকল্য এবং প্রশাসনিক অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে।

ভর্তি পরীক্ষার আয় ব্যায়ের হিসাব আহ্ববান করে অধ্যাপক আব্দুল হক বলেন, উপাচার্য নিজের পরিদর্শন ভাতা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছেন, অথচ সাধারণ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে মাত্র ৫ শতাংশ পরিদর্শন ভাতা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় আয় হয়েছে প্রায় ২১ থেকে ২৩ কোটি টাকা। সেখানে আমরা হিসাব করে দেখলাম, খুব বেশি হলে এখানে ৭-৮ কোটি টাকার বেশি খরচ হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তাহলে এ অর্থ কোথায় যাচ্ছে? এ টাকা কোন খাতে ব্যয় করছেন, সেটা যদি সবার সামনে তুলে না ধরেন, তাহলে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।

এছাড়াও, ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রির টাকা চবি উপাচার্য, শিক্ষক এবং একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়ে সংসদে উত্থাপন করা জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক নয় বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, এ অভিযোগের কারণে টাকা ভাগাভাগির দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের ওপরেও এসে পড়েছে। অথচ এসবের সঙ্গে শুধুমাত্র প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই জড়িত থাকতে পারে৷ কেননা সাধারণ শিক্ষকরা আয়-ব্যয়ের হিসাবও জানেন না, ভাগ বাটোয়ারার হিসেব তো অনেক দূরের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ বলছে ভর্তি পরীক্ষার যে আয়, এরচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। আমরা বলেছি যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে প্রয়োজনে আমরা হল পরিদর্শনের যে সম্মানি দেওয়া সেটা আমরা নিবো না, কিন্তু আয়-ব্যয়ের হিসাবটা যেই সভায় আপনারা নির্ধারণ করেন, সেখানে শিক্ষক সমিতির একজন সদস্যকে রাখুন। তাহলে শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা বাকিদের কাছে সঠিক তথ্যটা পৌঁছে দিবো। কিন্তু তারা এতে রাজি হননি।

এর আগে, গত রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলন ডেকে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেছিলেন, এ ব্যর্থতা আমার না। মানুষের চিন্তায় ভুল। ওরা মনে করেছে এভাবে কিছু আদায় হবে। ছাত্রদের মধ্যে যে অস্থিরতা চলছে সেখানে শিক্ষক সমিতির আন্দোলন তাদের প্রভাবিত করেছে বলে আমি মনে করি। শিক্ষক সমিতি এরকম অযৌক্তিক আন্দোলন না করলে ছাত্ররা এমন সাহস পেত না। আমাদের এখানে মডেল থানা হচ্ছে। থানা হয়ে গেলে আমাদের এখানে পুলিশ থাকবে। ছাত্রদের যে মারামারির কথা বলছেন সেটা নিরসন হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।