সবুজ পাহাড়ের বিলেতি ধনেপাতার সুগন্ধে মাতোয়ারা দেশ

পার্বত্যজেলা রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে প্রতিবছরই ভালো বিলেতি ধনেপাতার চাষ হয়। কাপ্তাইয়ের এই ধনেপাতার কদর দেশজুড়ে। এছাড়া এখানে উৎপাদিত এই বিলেতি ধনেপাতার সুগন্ধ ব্যাপক। সবুজ এই ধনেপাতার দুপাশে খাঁজকাটা থাকার ফলে দেখতে অনেক ভালো লাগে।

সম্প্রতি উপজেলার কাপ্তাই—ঘাঘড়া সড়কের সাফছড়ি, দেবতাছড়ি, সাক্রাছড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে সারি সারি সাজানো হচ্ছে বিলেতি ধনিয়াপাতা। এই ধনিয়া পাতাগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছাঁনোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষী এবং সরবরাহকারীরা। স্থানীয় বাজারসহ শহরাঞ্চলে এই ধনিয়া পাতার ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভাল দামও পাচ্ছেন চাষীরা। তাছাড়া প্রতিবছরই ধনেপাতা চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি অঞ্চলের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা।

কাপ্তাই কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে পাহাড়ি ও সমতল এলাকায় এই বিলেতি ধনেপাতার ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় ধনেপাতা চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা। একবার বীজ বুনলে কয়েক বছর পর্যন্ত গাছ বেঁচে থাকে এই পাতার। ফলে অনায়াসে বারবার পাতা সংগ্রহ করা যায়। যার কারণে এটি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।

কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা বিনতা তঞ্চঙ্গ্যা, সমীরণ তঞ্চঙ্গ্যাসহ বেশ কয়েকজন ধনেপাতা চাষী জানান, তারা পাহাড়ে বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি এটি চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন। বর্তমানে তারা পাইকারিভাবে প্রতিকেজি ধনেপাতা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ধরে বিক্রি করছেন। এই ধনেপাতা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া এটি সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব বলে অনেক নতুন চাষী ধনিয়া পাতা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে তারা জানান।

ওয়াগ্গা সাক্রাছড়ি এলাকার সাধন তঞ্চঙ্গ্যা নামের আরেক কৃষক জানান, এই ধনিয়া পাতা পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন বাগানের নিচে এবং আনাচে-কানাচে চাষ করা সম্ভব। যার ফলে আলাদা কোন জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া এটি চাষ করে কমবেশি সবাই সফলতা পেয়ে থাকে। ফলনও হয় বাম্পার। যার ফলে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা অর্জন করছেন অনেক কৃষক পরিবার।

এ বিষয়ে কাপ্তাই কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাপ্পা মল্লিক জানান, কাপ্তাইয়ে তাঁর ব্লকে প্রায় ৬ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই বিলেতি ধনেপাতার চাষ হয়ে থাকে। প্রায় প্রতিবছরই প্রতিটি এলাকায় ভালো ফলন হয়। তাছাড়া এ ধনেপাতা সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও রাসায়নিক সার ছাড়া উৎপাদন করায় একদিকে যেমন এর চাহিদা বেশি, অপরদিকে কাপ্তাইয়ে উৎপাদিত এই ধনেপাতা স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। এতে কাপ্তাইয়ের কৃষকেরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মধুসূধন দে জানান, কাপ্তাইয়ের ধনেপাতার সুনাম—খ্যাতি সারাদেশে রয়েছে। আর বিশেষ করে তিন পার্বত্য জেলায় সবচেয়ে বেশি ধনেপাতা চাষ হয় কাপ্তাইয়ে। পাশাপাশি কাপ্তাই থেকে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়াতে এই ধনেপাতা খুব অল্প সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এতে কাপ্তাইয়ের প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষক যারা ধনেপাতা চাষ করে তারা খুব স্বাবলম্বী ও উপকৃত হচ্ছেন। আমরা কাপ্তাই উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সবসময় ধনেপাতা চাষে স্থানীয় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করার চেষ্টা করি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।