৫ বছরের শিশুকে নিয়ে মা—দাদার টানাটানি, নিষ্পত্তি গ্রাম আদালতে

‘সারাবিশ্বে আলোচিত জাপানী দুইশিশু জেসমিন মালিকা ও লাইরা লিনাকে নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হতে না হতেই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানে দুই পরিবারের মধ্যে একই ঘটনার অবতারনা ঘটেছে।’ তবে এই মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে গ্রাম আদালতে। ২ ঘন্টার যুক্তিতর্ক শেষে মামলা নিষ্পত্তি করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম।
মা শব্দটি শুনলেই প্রতিটি মানুষের শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালবাসা প্রকাশ পায়। অতি মধু মাখা শব্দ ‘মা’। কিন্তু কর্ণফুলীর বড়উঠানে ঘটলো বিরল ঘটনা। পিতার মৃত্যুর পর মায়ের কাছে যাচ্ছে না অবুঝ শিশু আবরার হোসেন মাহির (৫)। ছেলেকে ফিরে পেতে মায়ের আর্তনাদ গেল কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে।

অভিযোগের ভিত্তিতে উভয় পক্ষের উপস্থিতি সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলমের আদালতে নিষ্পত্তি হলো ছেলে নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি।
জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে বড়উঠান ইউনিয়নের দক্ষিণ শাহমীরপুর এলাকার দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ এরশাদ উল্লাহ সঙ্গে বিবাহ হয় একই এলাকার মিনু আকতারের (২৫)। তাদের সংসারে দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গত দেড় মাস আগে দুবাই প্রবাসে মারা যান স্বামী এরশাদ উল্লাহ। মৃত্যুর পর স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে আসলে তাদের বড় ছেলে আবরার হোসেন মাহির (৫) রয়ে যায় বাবার বাড়িতে। সেখান থেকে ছেলেকে মায়ের কাছে ফিরে পেতে অভিযোগ দেন চেয়ারম্যানের গ্রাম আদালতে। সোমবার দুপুরে সালিশী বৈঠকে উভয়পক্ষকে ডাকা হলে মায়ের কাছে যেতে চাচ্ছিলো না ছেলে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েন উপস্থিত সকলে। ছেলেকে মাসের ১৫ দিনই মায়ের কাছে থাকার জন্য সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। হাজার বার চেষ্টা করে কোলে নিতে পারেনি ছেলেকে মা।

মা মিনু আকতার বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এরমধ্যে আমার ছেলেকে আমার শশুর বাড়ির লোকজন আমার কাছে আসতে দিচ্ছিল না।

তার শশুর আহমদুল হক বলেন, ছেলে মায়ের কাছে যেতে চাচ্ছিল না। এরমধ্যে তার মা শশুর বাড়িতে না থেকে বাপের বাড়িতে থাকছেন। চেয়ারম্যান সাহেব সিদ্ধান্ত হয়েছেন ছেলে যখনই মায়ের কাছে যেতে চাইবে তখনই তার মায়ের কাছ যেতে পারবে, এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সে আমাদের নাতী, তাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার দায়িত্ব আমাদেরও।

ইউপি সদস্যা জোবাইদা আকতার মিতু বলেন, সাধারণ মানুষ এখানে পারিবারিক বিরোধসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে আসে। সে গুলো আমরা আলাপ-আলোচনা করে কাগজপত্র দেখে সুষ্ঠু সমাধান দিই। এতে গ্রামের মানুষ উপকৃত হয়।
পরিষদের সচিব ওমর ফারুক বলেন, সাধারণ মানুষ বিচারের আশায় অভিযোগ নিয়ে আসলে উভয় পক্ষকে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়। এরপর গ্রাম আদালতে সপ্তাহে দুইদিন দু’পক্ষকে নিয়ে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সমাধানের চেস্টা করা হয়।

বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, এরকম ঘটনা এটাই প্রথম সন্তান মায়ের কাছে যেতে যাচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিপাকে পড়েছিলাম। ছেলেটার ভবিষ্যৎ চিন্তা করে পরিষদে সবাইকে ডেকে একটি সমাধানের চেষ্টা করেছি। মায়ের কাছে যখনই যেতে চাইবে তখনই পাঠানোর ব্যবস্থাসহ তার সবধরণের খরচ বহনের বাপের বাড়ির লোকজন।

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গ্রামের মানুষরা ছোট ছোট বিরোধ নিম্পত্তির জন্য গ্রাম আদালত সৃষ্টি করেছেন। মানুষ ছোট ছোট বিরোধ গ্রাম আদালতে অভিযোগ দিচ্ছে। স্বল্প সময়ে তা সমাধানও হচ্ছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।