৭১-এর মতো জীবনবাজি রেখে কাজ করতে চান অ্যাডভোকেট হাশেম

রাত পোহালেই চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচন। প্রতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী এই বারের।

এবার নির্বাচনে ১নং ব্যালট নিয়ে সভাপতি পদে লড়ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম।

জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আবু হাশেম চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, বীর চট্টলার আদালত অঙ্গনে জীবনের ৪৮ বছর আইন পেশায় কাটিয়েছেন। তাই এই অঙ্গনের নবীন প্রবীণ সকল আইনজীবীকে আমার পরিবারের সদস্যের মতো মনে হয়। ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। এবার আইনজীবীদের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করবো।

৪৮ বছর ধরে মহান আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন এ আইনজীবী। তিনি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম ছাত্র রাজনীতির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত। ৬ দফা, ১১ দফা, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণআন্দোলন থেকে শুরু করে সকল আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় রয়েছেন।

সদালাপী ও সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত আবু মোহাম্মদ হাশেম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত ৬ দফার পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৮-৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের অবিভক্ত চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ হাশেম।

আবু মোহাম্মদ হাশেম ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি প্রিলিমিনারীতে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই সালে বার কাউন্সিলে ইনটিমেশন জমা দিয়ে শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসাবে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনে চট্টগ্রামের দেশবরেণ্য আওয়ামীলীগ নেতা এম এ আজিজ ও জহুর আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ দফা তথা ১১ দফার সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আনীত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের আন্দোলনে ছাত্র সমাজের পক্ষে নেতৃত্ব দান করেন। একই সাথে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেন এবং ৭০ সালে পাকিস্তানব্যাপী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এই আইনজীবী ।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১নং সেক্টরের স্টুডেন্ট মোবিলাইজার ছিলেন এবং দেশের ভিতরে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশী ছাত্র-শ্রমিকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন ও হরিনা ক্যাম্পের ছাত্র প্রতিনিধি ছিলেন আবু মোহাম্মদ হাশেম।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর জোনাল কমান্ডার হিসেবে হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও রাউজান এই চার থানার দায়িত্ব নিয়ে দেশের মধ্যে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করেন তিনি।

আবু মোহাম্মদ হাশেম চট্টগ্রামের সংবাদপত্র দৈনিক দেশবাংলার প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭২-৭৩ সালে। তিনি ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট ডিভিশনে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভূক্ত হন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯৯০ সালে এবং ১৯৯২ সালে সহ-সভাপতি ও ২০০২ সালে সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে তালিকাভূক্ত হন এই আইনজীবী ।

অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেমের কনিষ্ট পুত্র ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোহাম্মদ তানভীর হাশেম মুনিম ২০০৯ সালে ইংল্যান্ড এর লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-এট-ল ডিগ্রী লাভ করে ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনের আইনজীবী হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন।

আইএইচ/এফএম

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।