নিজের শেষ দিনেও ৪৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে গেলেন ড. শিরীণ!

দীর্ঘ ৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের অধ্যায় শেষ হয়েছে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়ে এই পাঁচ বছরের প্রায় প্রতিটি সময়ই আলোচনা-সমালোচনার বিষয় ছিলেন তিনি। সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ ইস্যুতে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ প্রতিনিয়তই লেগেছিল শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে। আর এসব অনিয়ম-অভিযোগ থেকে বের হতে পারেননি উপাচার্য হিসেবে নিজের শেষ কর্মদিবসেও।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার অধ্যায়। তবে নিজের শেষ দিনে এসেও তিনি নিয়োগ দেয়া থেকে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেননি। এদিন দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে, হল ও দপ্তরে অন্তত ৪৪ জনকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেককেই দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে আলাদা কোনো নিয়োগ বোর্ড বসানোর প্রয়োজন পড়ে না। রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার পর উপাচার্য তা অনুমোদন দেন। এরপর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এসব পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে নিয়োগপ্রাপ্তরা এর বিপরীতে আবেদন করে নিয়োগ স্থায়ী করার সুযোগ পান। এরই সুযোগ নিয়েই সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিকভাবে লোকবল নিয়োগ করে আসতেছিলেন বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ তার শেষ কর্ম দিবসেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি৷ রেজিস্টারের স্বাক্ষরের মাধ্যমে মোট ৪৪ জনকে বিভিন্ন বিভাগ, হল ও দপ্তরে নিয়োগ দিয়ে গেছেন তিনি। নতুন উপাচার্য নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগেই তিনি এসব নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমদকে একাধিকবার ফোন করা হলে দুজনের কেউই কোনো প্রকার সাড়া দেননি।

তবে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান সৈয়দ মনোয়ার আলী বলেন, আমি শুনেছি গতকাল আর আজ মিলে মোট প্রায় ৩০ জনকে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের অর্ডার হয়েছে। তবে আমরা এখনো কোনো এপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পাইনি। লেটার পেলে আমরা সেল থেকে সেটা অনুমোদন দেব।

তবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সেলের প্রধান মো. ওসমান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন বলেন, আমরা সিন্ডিকেট থেকে একটি কমিটি করে দিয়েছিলাম যাতে করে কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তকে না মেনে তিনি নিজের মনগড়া নিয়োগ দিয়েই গেছেন। সিন্ডিকেটে কমিটি গঠনের ওই তারিখের পর থেকে যতগুলা এরকম নিয়োগ হয়েছে প্রত্যেকটাই অবৈধ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।