প্রতিটি সামর্থবান মানুষের ওপর ফিতরা ওয়াজিব। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের সময় যে ব্যক্তির নিকট তার ও তার পরিবারের খাদ্য-খোরাক বিদ্যমান রয়েছে এবং সেই সাথে ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য আছে তার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা ফিতরা ওয়াজিব করেছেন। এর দ্বারা রোজার ত্রুটিবিচ্যুতি মার্জনা হয়। গরিব মানুষ ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে। ফিতরা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বক্ষণে। অর্থাৎ ফিতরা দিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়া।
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’ গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং নামাজের পূর্বে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যা আদেশ করেছেন তা আল্লাহতায়ালা কর্তৃক আদেশ করার সমতুল্য। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। ’ -সূরা আন নিসা: ৮০
ফিতরা যারা দেবেন
সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্যবানদের অধীনস্ত পরিবারের সব সদস্যদের ফিতরাও দায়িত্বশীল ব্যক্তি আদায় করবেন। অর্থাৎ পরিবারের শিশু-কিশোর যদি অর্থের মালিক না হয় তবে বাবাই পরিবারের লোকদের ফিতরা আদায় করবেন।
এক কথায় সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব স্বাধীন, পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদারে ওপরই ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। বালেগ সন্তান যদি পাগল হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব ৷
ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
ঈদুল ফিতরের দিন কোনো স্বাধীন মুসলমানের কাছে জাকাতের নিসাব তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা তার সমমুল্যের নগদ অর্থ কারো কাছে থাকলেই ওই ব্যক্তির জন্য ফিতরা ওয়াজিব।
এ সম্পদ ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। তবে ব্যতিক্রম হলো- জাকাতের জন্য এ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকতে হবে, আর ফিতরার ক্ষেত্রে এক বছর থাকা শর্ত নয়। আর এসব ব্যক্তির জন্য ফিতরা গ্রহণ করাও হারাম।
আবার বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, স্থাবর সম্পদের মূল্য (যদি ব্যবসার জন্য না হয়) জাকাতের নিসাবের অন্তর্ভূক্ত নয় ৷ কিন্ত ফিতরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র,ঘর-বাড়ি ও স্থাবর সম্পদ, ভাড়া বাড়ি, মেশিনারীজ, কৃষিযন্ত্র ইত্যাদি (উপার্জনের জন্য না হলেও) এসবের মূল্যের হিসাবও ফিতরার নেসাবে অন্তর্ভূক্ত হবে ৷
ফিতরা যখন ওয়াজিব হয়
ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর সব সামর্থ্যবান মুমিনের ওপর ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। এ সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে যদি কারো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তবে ওই বাচ্চার জন্যও ফিতরা আদায় করতে হবে।
পবিত্র মাহে রমজানে এ বছর বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা ও সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় এই হার নির্ধারণ করা হয়।
সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে, ইসলামি শরিয়াহ মতে মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী গম, আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবেন।
আটার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’)। খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের ক্ষেত্রে তিন কেজি ৩০০ গ্রামের (এক সা’) মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করতে হয়। এসব পণ্যের বাজার মূল্য হিসাব করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়।
উন্নতমানের আটা বা গমের ক্ষেত্রে ফিতরা এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’) বা এর বাজার মূল্য ৭৫ টাকা। যবের ক্ষেত্রে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম (এক সা’) বা এর বাজার মূল্য ৩০০ টাকা ফিতরা দিতে হবে।
এছাড়া তিন কেজি ৩০০ গ্রাম কিসমিস বা এর বাজার মূল্য এক হাজার ৪২০ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা যাবে। খেজুরের ক্ষেত্রে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য এক হাজার ৬৫০ টাকা ও পনিরের ক্ষেত্রে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য দুই হাজার ৩১০ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে।
ফিতরার পণ্যের স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। সে অনুযায়ী স্থানীয় মূল্য পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সম্পদশালী ব্যক্তিকে যার যার অবস্থান অনুযায়ী ফিতরা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএফ
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।