আম্রপালি চাষে ভাগ্য ফিরল বিদেশ ফেরত দৌলতের

দীর্ঘদিন প্রবাসে বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করে সফলতার মূখ না দেখলেও দেশে ফিরে আম্রপালি জাতের আম চাষ করে ভাগ্য বদল হয়েছে মোঃ এয়াকুব দৌলতের। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারায় প্রায় ৫ একর জমিতে আম্রপালি জাতের আম চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।
তাঁর বাগানে রয়েছে প্রায় ১ হাজারের বেশি আম গাছ। টিলা ও সমতলে গড়ে তুলা দৃষ্টিনন্দন বাগানের শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা আম্রপালি। গাছে ঝুলছে থাকা আমগুলো বেশ রসালো ও সুস্বাদু। প্রতিদিন তাঁর বাগানে ভিড় করছে ফটিকছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ও খুচরা আমের ক্রেতাসহ স্থানীয়রা। এছাড়া অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে তার আম।

সফল আমচাষী এয়াকুব দৌলতের সাথে কথা বলে জানা যায়, সংসারের গ্লানি ও অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গিয়েছিলেন প্রবাসে। কিন্তু দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকেও অবস্থার উন্নতি করতে না পেরে দেশে ফিরে বেকারত্বের কবলে পড়ে হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। পার্শ্ববর্তী রামগড় উপজেলায় এক আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে আম্রপালি আম চাষের সন্ধান পায়।
বাণিজ্যিকভাবে সুস্বাদু আম চাষে ভাগ্যবদলের আশায় নিজের পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদ শুরু করেন। আমের চাষাবাদ দেখে পরিবারসহ এলাকার লোকজন তাকে অনেকটা পাগল আখ্যায়িত করে। দেশীয় ভুমিতে কি এ ধরনের আমের চাষ হবে? এমন প্রশ্ন ছিল সকলের। কিন্তু সকলের অবজ্ঞা আর অবহেলাকে শক্তি আর অনুপ্রেরনায় পরিণত করে সামনে এগিয়ে চলেন দৌলত।
স্বল্প পরিসরে প্রথম বছরের সফলতাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে শুরু করেন বড় পরিসরে আম চাষ। এখন দাঁতমারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ফকিরটিলা এলাকায় ৫ একর টিলা ভুমিতে তাঁর বিশাল আম্রপালির বাগান। যেখানে রয়েছে প্রায় এক হাজার আম্রপালির গাছ।

তিনি জানান, এ বছর প্রায় ২০ টন আম বিক্রির প্রত্যাশা করছেন। যা বিক্রি করার পর শ্রমিকের মজুরীসহ আনুসাঙ্গিক খরচ মিটিয়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ আয় হবে বলে তাঁর আশা। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী গত ১২ জুন থেকে শুরু হয়েছে গাছ থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত। এ বছর সাইজ অনুযায়ী আমের বাজার দর নির্ধারন করা হয়েছে আম ৮০ টাকা/৬০ টাকা/৫০ টাকা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দৌলতের বাগানের প্রায় ১০ জনেরও বেশী নারী ও পুরুষ শ্রমিক গাছ থেকে আম সংগ্রহ করে বাজারজাত করার জন্য ক্যারেট ভর্তি করছেন। স্থানীয় দাঁতমারা বাজারে অস্থায়ী স্টল দিয়ে স্থানীয়ভাবে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাইকারীভাবে সরবরাহ করছেন।
দৌলতের আম্রপালির বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষরা ভিড় করছেন তাঁর বাগানে। চলছে বেচাকেনাও।

তবে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে আরো বৃহৎ আকারের আম্রপালির চাষ করা সম্ভব বলে জানান এ কৃষি উদ্যোক্তা।

জানা যায়, এ বছর ভাল মুকুল আসলেও আবহাওয়া প্রতিকুলে থাকায় ফলন আশানুরূপ হয়নি। এ ছাড়া আমের মুকুলে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও ছত্রাকের আক্রমনের কারণে অনেক আম পরিপক্ষ হওয়ার আগেই জরে গেছে।
তাঁর মত অনেক উদ্যোক্তাই আমের মুকুলে পোকার আক্রমন প্রতিরোধে সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এ ছাড়া সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী সল্পসুদে কৃষি ঋণও পায়না তাঁর মত অনেক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা।

দৌলতের পিতা আবুল কাসেম বলেন, প্রথম দিকে ছেলের আম্রপালির চাষের উপর পরিবারের অনিহা থাকলেও পরবর্তীতে তার সফলতা দেখে সবাই খুশি। জীবনের শেষ বয়সে এসে নাতি নাতনি নিয়ে বাগানেই ঘুরে বেড়ান তিনি।

দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জানে আলম বলেন, দৌলতের মত শিক্ষিত বেকার যুবকরা বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত জমিতে আম্রপালিসহ নানা ধরনের ফলজ বাগান করছে। এটি খুবই ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। তিনি বলেন, এসব তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের আরো উৎসাহিত করতে পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতাও করা হবে।

এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আম্রপালি মিষ্টিজাতের আম। এটি ইন্ডিয়ান একটি জাত। আমাদের দেশে এই আমটিকে আমরা মডিফাই (উন্নতকরণ) করে ‘আম্রপালি’ নাম দিয়েছি। এটি বারি আম-৩। এই আম সাইজে ছোট এবং আঁশবিহীন। প্রবাসী দৌলত আম্রপালি চাষে সফল হচ্ছেন। তাকে দেখে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে। আমরা সকল চাষীদের সহযোগিতা করছি।’

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।