কমডোর রাব্বানী হত্যা—বিলাই সাইফুলেরও যাবজ্জীবন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার জেলহত্যা মামলার সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত কমডোর গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামি মো. সাইফুল ইসলাম প্রকাশ বিলাই সাইফুলের পুনঃবিচারে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। আদালত একই রায়ে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও একমাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। কমডোর গোলাম রাব্বানী হত্যার ঘটনায় পুনঃবিচারে বিলাই সাইফুলের যাবজ্জীবনের মাধ্যমে মোট ছয় আসামির যাবজ্জীবন সাজা হলো। খালাস পেলেন এক আসামি।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রবিউল আলম রায় ঘোষণা করেন বলে জানান ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশ। তিনি বলেন বলেন, ‘হাই কোর্টের আদেশে পুনঃবিচারে আসামি মো. সাইফুল ইসলামের যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন আদাতল। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

কমডোর গোলাম রাব্বানী ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশে গুলিবিদ্ধ হন। ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৪ এপ্রিল মারা যান। চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম রাব্বানী সেসময় কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। ওই ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম এমতাজুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন।

একই বছরের ২৮ আগস্ট আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলম, মো. সেলিম, সোহেল প্রকাশ আবদুল মালেক ও মো. হাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে মো. সেলিম, মো. হাশেম ও সোহেলকে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(বি) ও ৩০২ ধারায় পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
এছাড়া আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল ও মনছুর আলমকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন আদালত।

এরপর বাদীপক্ষ নিম্ন আদালতের রায়ের পর মামলার হাইকোর্টে দুই আসামি আবু নাসের ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে এবং আসামি সাইফুলের খালাসের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন।
২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীর সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।
এছাড়া খালাস পাওয়া আসামি মো. সাইফুল ইসলামের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট—‘আসামি সাইফুলের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য বিচারিক আদালতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা ছাড়াই রায় দেওয়া হয়েছিল। ফলে আসামি বিচারে খালাস পেয়েছিলেন।’ পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নতুন করে রায় দিতে বিচারিক আদালতে নথি ফেরত পাঠানো হয় হাইকোর্ট থেকে।

পিপি অ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশ বলেন—এরপর দু’জন সাক্ষীকে রি-কল করে পুনরায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার। গতকালই জামিনে থাকা সাইফুলকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। আজ তার সামনেই রায় ঘোষণা হয়। রায়ের মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, আসামি সাইফুল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।