চবি শিক্ষার্থীদের শাটলে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রশাসন!

নাগরিক জীবনের কোলাহলমুক্ত ছায়া সুনীবিড় পরিবেশে পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্যাম্পাস। চবি শিক্ষার্থীদের প্রিয় বাহনের নাম শাটল ট্রেন। ঐতিহ্যের শাটলে জড়িয়ে আছে হাজারো স্মৃতি। সড়ক পথের যানজটে সময় আর অর্থ সাশ্রয়ী হিসেবে প্রতিদিন প্রায় আট থেকে দশ হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে যাতায়াতে বেছে নেন নিরাপদ বাহন শাটল।

সেই নিরাপদ বাহনটিতে এখন অঙ্গহানী এবং জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে চবি শিক্ষার্থীদের। সাম্প্রতিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ প্রতীকি প্রতিবাদ হিসেবে মোটর সাইকেলের হেলমেট পরে শাটলে চড়তে দেখা গেছে।

শাটলে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা অনেক আগ থেকেই চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেটা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। আর প্রতিবার পাথর নিক্ষেপে কেউ আহত হলে প্রশাসন শাটলে বহিরাগত নিষিদ্ধ করে। অথচ পাথর নিক্ষেপের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এখনো লোক দেখানো পদক্ষেপে সীমাবদ্ধ প্রশাসনের তৎপরতা। গত ৯ এপ্রিল প্রশাসন শাটলে অভিযান পরিচালনা করে। একই দিনে শাটলে পাথর নিক্ষেপে আহত হয়েছে চবি শিক্ষার্থী পুনম বড়ুয়া। এই ঘটনায় প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকিয়ে থাকে রেলওয়ের দিকে। রেলওয়ের ভাবটা যেন- ট্রেন দিয়েছি কত না, আবার নিরাপত্তা? তারা বলটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টে ঠেলে দেয়। আর নিয়মিত বলি হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতার নজীর হলো- এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থী পাথর নিক্ষেপসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। অথচ এই ধরনের প্রতিটি ঘটনা নিয়ে একটি ডাটাবেইজ সংরক্ষন করা যেতো।

যে ডাটাবেইজ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে উত্থাপন করলে নীতি নির্ধারকরা একটা সমাধান নিয়ে এগিয়ে আসতে পারতেন।

সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অরুপ বড়ুয়ার সামনেই পাথরের আঘাতে আহত হন পুনম বড়ুয়া নামের এক শিক্ষার্থী। তখন সহকারী প্রক্টর পুনমকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

এর আগে ৬ এপ্রিল পাথরের আঘাতে আহত হন চারুকলা বিভাগের ইয়াসিন তুসি। তুসি নিজের টাকায় চিকিৎসা করেছেন। তার খবরও প্রশাসন নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি বলে অভিযোগ আছে। তুসির মতো আগে আহত যারা হয়েছেন তাদেরও একই অবস্থা, সংশ্লিষ্টদের কেউ খবর নেননি।

অর্ধশত বছর পার করা দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ থেকে তৈরি হয়েছেন মন্ত্রী, এমপি, মন্ত্রীপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ডিআইজিসহ আরও অনেক সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।

চবি প্রশাসন যদি এই বিষয়গুলো নিয়ে সঠিক চ্যানেলে আন্তরিকভাবে কাজ করতো তাহলে এই সমস্যার সমাধান আসতো অনেক আগেই। কিন্তু আজ অবধি তা হয়ে ওঠেনি।

শাটলের বগিগুলোতে লাইটের ব্যবস্থা থাকলেও প্রায় সময় তা জ্বলে না। তখন শিক্ষার্থীদের রাতে বগির অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য মোবাইলের টর্চের আলোই শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। এসবের মাধ্যমেই শাটল নিয়ে কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক ছাত্রের পাশাপাশি ছাত্রীরা শহরে আসেন টিউশন করতে। রাতে ফিরেন শাটলে। কারণ বাসে ফিরতে গিয়ে অনেকেই লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর চবির এই শাটলে ওঠে বসে থাকে মাদকাসক্ত, বখাটে যুবকরা। নিয়মিত সিকিউরিটির ব্যবস্থা রাখলে এই উৎপাত থেকে ছাত্রীরা নিরাপদ হয়। জনবল সংকটসহ বিভিন্ন অজুহাত এবং অব্যবস্থাপনায় পুরোই অনিরাপদ রাখা হয়েছে শাটলকে।

বটতলী স্টেশন, ঝাউতলা, ষোলশহর স্টেশন, ক্যান্টমেন্ট স্টেশন এলাকা, ফতেয়াবাদ এলাকা থেকে চবি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বস্তি। বস্তির টোকাইরা নেশা সেবন করে ট্রেনে ওঠে। অনেক সময় মোবাইল, মানিব্যাগও ছিনতাই হয়। বস্তি এলাকাগুলোই প্রধানত অপরাধ প্রবণ। বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

রেলওয়ে চাইলেই এই রুটের সংরক্ষিত স্থানগুলো সংরক্ষণ করে শাটলের নিরাপদ রুট নিশ্চিত করতে পারে। চবি প্রশাসন আন্তরিক হলে সংশ্লিষ্টদের সাথে সমন্বয় করে নিরাপদ রুট বাস্তবায়ন সহজ হবে।

আর না হয় এভাবে চবির মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাথরের আঘাত সহ্য করবে। বখাটে ও নেশাখোরদের হাতে হেনস্তা হবে। অবশেষে চোখ, মাথা এবং হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকাবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।