‘চিকিৎসকের সুরক্ষা দিতে না পারলে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে’

চট্টগ্রামে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পরপর দুই চিকিৎসক হামলার শিকার হওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতি। তাঁদের দাবি—এক চিকিৎসকের ওপর হামলা ঘটনা ঘটলেও উপযুক্ত বিচার না হওয়ার কারণে চিকিৎসকদের ওপর হামলা বেড়েই চলছে। চিকিৎসকদের ওপর যে হামলাগুলো হচ্ছে, এর অন্যতম কারণ হলো বিচারহীনতার সংস্কৃতি। একটা ঘটনার যদি বিচার না হয়, অপরাধীরা যদি ছাড় পেয়ে যায়, তাহলে সন্ত্রাসীরা আরো দুঃসাহস দেখাবে। সার্বিকভাবে চিকিৎসকরা তাদের কর্মক্ষেত্রে খুবই অনিরাপদ। চিকিৎসকদের সুরক্ষায় শক্তিশালী একটা আইন হোক। চিকিৎসকদের মধ্যে যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীতি আর উৎকণ্ঠা কাজ করে, তাহলে তাদের কাছ থেকে কখনোই ভালো চিকিৎসাসেবা আমরা আশা করতে পারি না। ফলে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী দুর্বত্তদের গ্রেপ্তার করা না হলে সর্বাত্মক কর্মবিরতির মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে সমিতি।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব বলেন সমিতির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শরীফ। এসময় হসপিটাল ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান, বিএমএ সহ-সভাপতি এবং স্বাচিপ’র চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি ডা. শেখ শফিউল আজম, বিএমএ চট্টগ্রামের কোষাধ্যক্ষ ডা. আরিফুল আমিন, শেভরনের এমডি ডা. বিশ্বনাথ দাশ, হসপিটাল ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এবং পার্কভিউ হসপিটালের এমডি ডা. এ টি এম রেজাউল করিম, সেনসিভের এমডি ডাঃ মইনুল ইসলাম মাহমুদ, বিএমএ’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মোঃ আবু নাছের, ন্যাশনাল হসপিটালের এমডি ও হসপিটাল ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ, মেডিকেল সেন্টারের এমডি ডা. মোঃ মনিরুজ্জামান, ইপিকের ডা. একিউএম অহিদুল আলমসহ সমিতির সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।

চিকিৎসকদের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসীবাহিনী দ্বারা বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দোষী ও জড়িতদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে সমিতির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, পটিয়ার ঘটনায় আসামীদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মেডিকেল সেন্টারে হামলাকারী আসামীদের জামিন বাতিল করতে হবে।

চিকিৎসকদের ওপর হামলার বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে’ দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগ এনে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশকে বেধড়ক মারধর করা হয়। বর্তমানে ডা. রক্তিম দাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে এবং হামলাকারীদের কিল ঘুষিতে তিনি মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছেন। পটিয়ার দুর্বৃত্ত কর্তৃক চিকিৎসকের ওপর হামলার পর থানায় মামলা দায়ের হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। বরং এ ঘটনায় অনেকটা অদৃশ্য নীরবতা দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে।
পটিয়ার ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ১৪ এপ্রিল দুপুর সোয়া ১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে এনআইসিইউতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর ওপর সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালায়। এতে ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর সাবকনজাংটিভাল হেমোরেজ (চোখে তীব্র রক্তক্ষরণ) ডেভেলাপ করেছে। ডা. রিয়াজের শরীরে বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। এবং হামলাকারীদের কিল ঘুষিতে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও হাসপাতালে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে মারাত্মকভাবে জখম করে। ঘটনার পরপরই পুলিশ প্রশাসনের তড়িৎ ব্যবস্থায় আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে ১ দিন পরেই আসামীরা জামিন পেয়ে যায়। তার জন্য চিকিৎসক সমাজ অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ ও তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।

পটিয়ার ঘটনায় আসামীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং মেডিকেল সেন্টারে হামলাকারী আসামীদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তার না করলে বেসরকারি চিকিৎসা সমিতি সর্বাত্মক কর্মবিরতির মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলে জানান ডা. শরীফ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।