চুয়েট ছাত্ররা দুর্ঘটনা নয় ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’র শিকার—১৩৭ প্রাক্তন শিক্ষার্থীর বিবৃতি

চুয়েটের চলমান আন্দোলনে সংহতি

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত এবং অপর এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হবার ঘটনায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ১৩৭ জন এক বিবৃতি দিয়ে সংহতি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা এই দুর্ঘটনাকে ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করে শোকা প্রকাশ করেন এবং একইসাথে ক্ষুব্ধ বলেও উল্লেখ করেন।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের সড়কগুলোতে মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল দেখে এখন আর এগুলোকে দুর্ঘটনা বলার কোন সুযোগ নেই। আমরা এসব মৃত্যুকে ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ বলে মনে করি। চট্টগ্রাম- কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়কটি হাটহাজারি, দক্ষিণ রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং কাপ্তাই উপজেলার দশ লক্ষাধিক মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত এবং অর্থনীতি ও পর্যটনের লাইফলাইন হলেও এই সড়কটি সবসময়ই প্রশাসনের সুদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত। দেশের শীর্ষস্থানীয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ- সুইডেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও এই সড়কটির দুরবস্থা এবং নৈরাজ্য আমাদের বঞ্চিত, ব্যথিত ও হতাশ করে তোলে।
এর আগেও ২০১৬ সালে ১০ আবর্তের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাইমিন সিয়াম, ১৫ আবর্তের শিক্ষার্থী তাহমিদ এর মৃত্যু হয় এই সড়কে। সিয়ামের মৃত্যুর পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবিনামা উত্থাপন করে আন্দোলন সংঘটিত করে এবং বেশ কিছু দাবি মেনে নেয়া হয়। যদিও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় নি। কিছুদিন পরেই নৈরাজ্য ফিরে আসে এবং ক্রমাগত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে থাকে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীই নয় বরং অনেক এলাকাবাসীও এই হত্যাকাণ্ডের শিকার। এই নৈরাজ্যের পেছনে মূল অনুঘটক হচ্ছে সরু রাস্তা, ফিটনেস এবং লাইসেন্সবিহীন যানবাহন, সড়কে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি এবং পরিবহনসঙ্কট।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ভুলে গেলে চলবে না যে, একেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পিছনে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং পারিবারিক বিনিয়োগই শুধু জড়িত নয় বরং অনেক মানুষের স্বপ্ন পূরণের দায়ভার নিয়েই শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। এই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধু কিছু সম্ভাবনাময় প্রাণ ঝরে গেলো তা নয় বরং একটি পরিবারের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তারও মৃত্যু ঘটলো। এই সামষ্টিক ক্ষতির পরিমাণ কোন অর্থমূল্যেই নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
দুইজন শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নেমে এলে একজন শিক্ষকের বিতর্কিত মন্তব্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে তা প্রশমনের দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রদের মৃত্যুতেএকজন সম্মানিত শিক্ষকের এমন নিষ্ঠুর বয়ানে আমরা হতবাক! আমরা অবিলম্বে তার প্রকাশ্য ক্ষমাপ্রার্থনার দৃষ্টান্ত দেখতে চাই।
এর আগেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাসবাণী শোনানো হয়েছিলো, কিন্তু দাবি শতভাগ কখনোই পূরণ হয় নি। চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা কোন আশ্বাসকে আর বিশ্বাস করি না। এইবারের যে সংগ্রাম, সেটি হোক শতভাগ দাবি আদায়ের সংগ্রাম।
আমরা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবর্তের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন পূর্ণ সংহতি জানাই। এবং পাশাপাশি দেশবাসীকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে মাঠে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই।
লড়াই চলবেই এবং বিজয় আমাদেরই হবে।

বিবৃতিদানকারী প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হলেন (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে নয়):
জোবায়ের জ্যোতি, অটল ভৌমিক, সোহানুর রহমান সৈকত, সুজিত রঞ্জন দাশ, অনিরুদ্ধ দাশ, মনীষী রায়, মিনহাজুল ইসলাম রিয়াম, ওমর ফারুক, শেখ নাহিয়ান, মাহবুব সোবহান চৌধুরি, মাউল কাজিম আখতার, কৌশিক চন্দ্র, আহসান হাবিব আকাশ, মীর তাইমুর জুবায়ের, মুয়িদ উদ্দীন চৌধুরী, মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, শিশির কুমার দাস, সুনান মাশরুর মিকদাত, রাহাত ইকবাল, ফাতেমা ইসলাম তানিয়া, সৌরেন পাল, মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, মিঠুন চন্দ্র নাথ, অনিন্দ্য নন্দী, আশেকুল ইসলাম, পিয়াল দাশ গুপ্ত, এস এ সুজন, সেলিম আহমেদ, সঞ্জয় হালদার, আসিফ ইফতি, ফাহমিদা লিজা পিয়া, তুর্জয় ধর দীপ্ত, সিরাজুল ইসলাম সৈকত, আতিকুজ্জামান উল্লাস, পাভেল আহমেদ, কেফায়েত ইসলাম, মোহাম্মদ জাহেদ মুরাদ সানি, মোহাম্মদ ফাহিম শাহরিয়ার সাকিব, শহীদুল ইসলাম, সীমান্ত পাল, মোহাম্মদ আহসানুল ইউসূফ ইমন, শিবলি নোমান, মাহির ফয়সাল রাহাত, সুদীপ্ত ভৌমিক, পারিজাত দেবনাথ, মোহাম্মদ ওয়াসাফ সাদাত, আল আমীন, শারাহ মেহজাবীন, প্রবাল সিংহ, নাওমি সুবায়ের, মিনহাজুল আবেদীন, মোঃ আরিফুল ইসলাম, সালেহা ফাতেমা, রাফিউল্লাহ আরিফিন, অঙ্কুর দাশ অভি, রিকু মোহরের, প্রীতক কুণ্ডু, রিয়াদ হাসান লিখন, ঐশি সরকার দিবা, দীপ্তনীল রায়, আরিফুল ইসলাম, মোঃ মোস্তাকিম মুকিত, ইমরান কবির, মোঃ কামরুল আনাম জয়, জাহিন দিয়ান কাব্য, জেড এম মাহিন, এস এম রিয়াজুল আলম, রাকিবুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় কর পিয়াল, মোহাম্মদ সাঈদ আনোয়ার, মির্জা আসিফ হায়দার, অংথাইচিং মারমা, আরিফ মাহমুদ শিকদার, আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল উদয়, আননূর আফসীন সিদ্দিকী, এস এম রাকিবুল ইসলাম, জয়ন্ত দাশ, রিজভী আহমেদ, মাহবুব সানি, তাসনিম আলম নিশাত, পীযূষ বিশ্বাস, সুবির সরকার, মুহতাসীন রিয়াসাদ, মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ, মঞ্জুরুল আলম প্রান্ত, আবিদ উর রহমান, ঋত্বিক চৌধুরী, মোঃ রাফিউল হোসেন, ইফতিখার আজিম, মোঃ ফারহান শাহরিয়ার, রায়হান আল মারুফ চৌধুরী, মোঃ রিফাত আমীন, দেবজ্যোতি দাস, নয়ন চৌধুরী, মোঃ তৌহিদুল ইসলাম নাঈম, নাজমুল হাসান হৃদয়, মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল্লাহ শিকদার, তানভীর মাহমুদ, তৌহিদ ধ্রুব, জনি নাথ, মোঃ আরিফুল হক, আকিব বিন নাসিম, মোঃ বায়েজিদ-বিন-ইসলাম, মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, দীপন মুখার্জি, অপু দেবনাথ, মোহাইমিন শোভন, অর্ঘ্য বিশ্বাস, সাদমান সৌমিক ইভান, মোঃ সাজিদ উজ্জামান জিশান, ফাইরুজ হুমায়রা ফারিন, শারদ চৌধুরী, রেদোয়ান হোসেন, মোঃ সাজ্জাদ উল ইসলাম, মোঃ আসিফ ইকবাল, ফাহাদ বিন ফারুক, মুহাইমিনুল ইসলাম সার্থক, রোমান শেখ, মোহাম্মদ আশিকুল আলম, রাফাত হোসেন, রাতুল ইসলাম, জেবিন ফৌজিয়া, মঈনুদ্দীন শিপন, শেখ ফারাহ আদৃতা, আবরার আহমেদ চৌধুরী, তানজিদ নাহিয়ান, হাসিবুল হাসান, দাউদ ইব্রাহীম, জিসান হায়াত, ধ্রুব নাগ, জামিলুর রেজা মজুমদার, কিশোর রায়, মঈন উদ্দীন আহমেদ বাবর, জারীন তাসনিম বিদিতা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।