পূর্বাচলেও স্বমহিমায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

সরকারের দুরদর্শী চিন্তার ফসল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার জন্য স্থায়ী ভেন্যু। আধুনিক সুযোগ সুবিধার অবকাঠামোয় ঢাকার পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলা স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হয়ে এতদিন মেলা চলতো ঢাকার আগারগাঁওয়ে। এবারের ২৬তম আসরটি স্থায়ী ভেন্যু পেয়েছে।

একটানা ১২ বার আগারগাঁও শেরেবাংলা নগরে মেলার ইজারা পেয়েছিলো মীর ব্রাদার্স। তাদের সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তারা এবারও মেলার ইজারা পেয়েছেন। নতুন ভেন্যুতে অভিষেক হওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন মীর ব্রাদার্সের জন্য ১৩ তম আয়োজন।

একদিকে করোনার হানা, অন্যদিকে বানিজ্য মেলা, এমন উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে তার অভিমত জানতে চাওয়া হলে মীর ব্রাদার্সের কর্ণধার মীর শহীদুল আলম বলেন- করোনার সময়ে আমরা বাংলাদেশীরা দুবাই এক্সপো –তে যেতে পারলে বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে পূর্বাচলে কেন নয়? আর এই মেলাকে সার্থক করা শুধু সরকার কিংবা ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব নয়। এই দায়িত্ব সকল নাগরিকের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলেই মেলায় অংশগ্রহণ করবে এই প্রত্যাশা করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমন রয়েছে সেই বাস্তবতাকে সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মেনে দর্শনার্থীরা মেলাতে আসছেন সেই জন্যে আমরা সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মেলা আরও জমবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিগত ২০১৩ সাল থেকে আমি ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলার সাথে জড়িত। অনেক চ্যালেঞ্জ্য মোকাবেলা করেছি। যে কোন চ্যালঞ্জ নিতে সব সময় প্রস্তুত আছি।

মীর শহীদুল আলম বলেন, দর্শনার্থীরা হচ্ছেন মেলার প্রাণ। একটি আন্তর্জাতিক মেলাকে সার্থক করতে হলে সকলের সমন্বিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব আছে। তারা মেলাতে অংশগ্রহণ করে এই আয়োজনকে সাফল্যমণ্ডিত করবেন। করোনার মধ্যেও দুবাই এক্সপো ২০২১ হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই অংশগ্রহণ করেছেন, শুধু ব্যবসায়ীই অংশ নিয়েছেন তিন শতাধিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকেও দুবাই এক্সপোতে অংশগ্রহণ করেছে।

উন্নত বিশ্বের মতো পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু নির্মাণের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, নতুন ভেন্যু, নতুন আমেজ সবকিছু মিলে ঢাকা বানিজ্য মেলা ২০২২ শিল্প ও বানিজ্য প্রসারে নতুন দিগন্ত উম্মোচন করেছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

পূর্বাচলেও স্বমহিমায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা 1

প্রসঙ্গত, ১ জানুয়ারি পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত হন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে মেলার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলছে। প্রবেশ মূল্য বড়দের জন্য ৪০ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা।

সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত ৩০টি স্পেশাল বাস চলছে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। মতিঝিল ও মিরপুর থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত চলছে বিআরটিসি বাস।

বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় আছে বিদেশি স্টলও। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন এবং ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে।

মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটিএইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস আইটেম, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্প পণ্যসহ হোম ডেকর পণ্য মেলায় প্রদর্শনী রয়েছে।

নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় এক্সিবিশন সেন্টারে বিল্ট ইন ১৬০টি সিসিটিভির সাথে অতিরিক্ত ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ গেটে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক ফায়ার ব্রিগেড নিয়োজিত রয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।