প্রযুক্তির কারণে অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে: আইজিপি

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, বর্তমানে নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে মানুষ পরিচিত হচ্ছে। আর প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার কারণে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম, মানবপাচার, মানিলন্ডারিংসহ নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। তবে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা পুলিশ বাহিনীকে প্রস্তুত করেছি।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

আইজিপি বলেন, আমরা বিডি পুলিশ হেল্পলাইন অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছি। সিএমপিতে সিটিজেন ইনফরমেশন ব্যাংক সিস্টেম চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে এই শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বলিষ্ঠভাবে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। অপরাধীদের তথ্য দ্রুত পাবার জন্য সিডিএমএস চালু হয়েছে। আমরা ইন্টেলিজেন্স ও টেকনোবেইজড পুলিশিং জোরদার করেছি। বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করছি। ডিজিটাইজেশনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আমরা সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি।

এক সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থির চরম অবনতি ছিলো- এমন বিষয় তুলে ধরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সুন্দরবন,কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের জেলেরা মাছ শিকার করতে পারতো না। এই বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দস্যুদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন অপরাধের বহুমুখীতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

প্রযুক্তির কারণে অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে: আইজিপি 1

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় দেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, সারাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা এসব মোকাবিলা করে দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে এসেছি। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে এজন্য আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। প্রতিনিয়ত যে চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে, সেসব মোকাবিলার জন্য আমাদের কার্যক্রমকে আমরা সুবিন্যস্ত করছি এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের উপযোগী করে গড়ে তুলছি।

এর আগে বক্তব্যের শুরুতে আইজিপি সিএমপির বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, সিএমপি সবসময় উদ্ভাবনী ও গণমূখী পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। করোনাকালীন সময়ে সিএমপির পুলিশ সদস্যরা জনগণের জন্য আত্নত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে এখানকার পুলিশ সদস্যরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।আমি একবার খবরের কাগজে পড়েছিলাম এক চোর ধরা পড়ে দৌঁড়ানোর সময় জরুরি সেবায় কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছে। সিএমপির পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে দোষ অনুযায়ী সাজার আওতায় এনেছে।

প্রযুক্তির কারণে অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে: আইজিপি 2

এ সময় আইজিপি চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সকল জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।

সুধী সমাবেশে চট্টগ্রামের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরিন আক্তার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও নগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন।

প্রযুক্তির কারণে অপরাধের ধরন পাল্টে গেছে: আইজিপি 3

প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর ৩ হাজার ২৩৮ জন পুলিশ সদস্য ও ৬টি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সের অধীনে এটি গঠন করা হয়। বর্তমানে সিএমপিতে ১৬টি থানা ও প্রায় ৭ হাজার সদস্য রয়েছে।

১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর সিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এমএম শরীফ আলী। ১৯৮০ সালের ২৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ ৩১তম সিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পান কৃষ্ণ পদ রায়। ২০২২ সালের ১৮ জুলাই থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।