রমজান মাসে ভ্রমণকালে রোজার বিধান

প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান যুগেও ভ্রমণ মানুষের জীবনের অতি প্রয়োজনীয় অংশ। দ্বীন প্রচার, অর্থ উপার্জন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষকে ভ্রমণে বের হতে হয়। আবার মহান আল্লাহর কুদরতের বৈচিত্র্যতা নিজ চোখে দেখে ঈমান বাড়াতেও মানুষ ভ্রমণে বের হয়। যে কারণেই ভ্রমণ করা হোক, তা মানুষের জন্য সীমাহীন কষ্ট, অস্বস্তি ও বিড়ম্বনার কারণ। অত্যাধুনিক বিলাসী যানবাহনের ভ্রমণও কিন্তু কষ্টমুক্ত নয়। তাই ইসলাম মানুষের জন্য বিধানকে সহজ করতে যেয়ে প্রায় সব ব্যাপারেই ভ্রমণের বিধান ভিন্ন রেখেছে।

যে ব্যক্তি ৮৭.৭৬ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দূরে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নিজের এলাকা ত্যাগ করেছে শরিয়তের পরিভাষায় সে মুসাফির। যতক্ষণ পর্যন্ত যে নিজ এলাকায় ফিরে না আসছে অথবা কোনো এলাকায় ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার ইচ্ছা না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সে মুসাফির বিবেচিত হবে।

মুসাফিরের জন্য রোজা অবস্থায় সিয়াম পালন করার বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা পবিত্র কালামে পাকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ বলেন, “রমজান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে, মানুষের জন্য হেদায়াত স্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী, সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী রূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদেরকে যে হেদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, হামজাহ ইবনে আমর আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, আমি কি সফরে রোজা রাখবো? তাঁর রোজা রাখার অভ্যাস ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি চাও রাখ, অন্যথায় ইফতার করো।’ (বুখারি, মুসলিম)

বেশিরভাগ সময় যারা সফরে থাকেন, তাদের সফর অবস্থায় রোজা রাখাই ভালো। তবে যদি তারা রোজা না রাখতে চায় তাহলে তাদের রোজা না রাখার সুযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে রোজা রাখার কারণে স্বাস্থ্যহানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, রুগ্ন হয়ে পরার সম্ভাবনা থাকলে, খুব বেশি পিপাসার্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, রোজা ছেড়ে দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিস এখানে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তার অবকাশ বা ছাড় দেয়া কাজগুলো কার্যকরী করা পছন্দ করেন, যেমনি তিনি তার প্রতি অবাধ্যতামূলক কাজ করাকে অপছন্দ করেন।’’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নম্বর ৫৮৬৬)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট একটি হাদিস উল্লেখ করে শেষ করতে চাই; যা হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম। রোজাদার বে-রোজাদরকে এবং বে-রোজাদর রোজাদারকে কোনো প্রকার দোষারোপ করেন নাই।’ তাই সফরে কষ্টকর হলে রোজা ভাঙতে কোনো দোষ নেই। সম্ভব হলে রোজা রাখাই উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সফরের সময় অবস্থানুযায়ী রোজার হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।