সিএনজি বিক্রির কমিশন মেরে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় খুন হন হেলাল

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সিএনজি চালক হেলাল উদ্দিনকে মাত্র এক হাজার টাকার জন্য নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হেলাল উদ্দিন একটি পুরাতন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্থতা করেছিলেন। তার বিনিময়ে ইলিয়াস ও হেলাল কমিশন পাওয়ার কথা ছিল পাঁচ হাজার টাকার। সিএনজি বিক্রয়ের পর আত্মীয়ের দেওয়া কমিশন থেকে ইলিয়াস মাত্র এক হাজার টাকা ধরিয়ে দেয় হেলালকে। কিন্তু হেলালের দাবী ছিল কমপক্ষে দুই হাজার টাকা। বাকী এক হাজার টাকা মেরেদেন ক্রেতার আত্মীয় ইলিয়াস।
সেই এক হাজার টাকা কয়েকবার চেয়েও পাননি হেলাল। হেলাল এক পর্যায়ে ইলিয়াসকে দেখে নেওয়ার কথা বলে হুমকি দেয়। খুনের মাস্টার মাইন্ড ইলিয়াস বোয়ালখালীর স্থানীয় বাসিন্দার। অপর দিকে হেলাল বিয়ে-সংসার করে বোয়ালখালীতে বসবাস করলেও নেত্রকোনার বাসিন্দা। ইলিয়াসকে হুমকি দেওয়ায় ইলিয়াস তার সহযোগীদের নিয়ে হেলালকে হত্যা করে।

মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় র‌্যাব চান্দগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-০৭এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ সিএনজি অটোরিক্সাচালক হেলাল উদ্দিন হত্যার কারণ ও আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান। এসময় র‌্যাব০৭এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার, হাটহাজারী কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

লে. কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, ৪ মাস পূর্বে ইলিয়াস তার মামাতো ভাইয়ের একটি সিএনজি বিক্রয় করার জন্য নিহত হেলাল উদ্দিনের সহযোগিতা চায় এবং উক্ত সিএনজিটি বিক্রয় করে দিতে পারলে ইলিয়াসের মামাতো ভাই তাদের দুজনকে ৫ হাজার টাকা বকশিস দিবে বলে জানায়। পরবর্তীতে উক্ত সিএনজিটি ইলিয়াস এবং হেলাল উদ্দিন দুজন মিলে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সে সময় ইলিয়াসের মামাতো ভাই খুশি হয়ে ইলিয়াসকে কিছু টাকা বকশিস দেয় এবং সেই টাকা থেকে ইলিয়াস কিছু টাকা রেখে এক হাজার টাকা হেলাল উদ্দিনকে দেয়। তখন হেলাল উদ্দিন ইলিয়াসকে বলে- তোর মামাতো ভাই তোকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছে কিন্তু তুই আমাকে মাত্র এক হাজার টাকা দিলে কেন? এই বিষয়ে হেলাল উদ্দিন ও ইলিয়াসের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয় এবং এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতিসহ মারপিট হয়। পরবর্তীতে ইলিয়াস প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে এবং পরিকল্পিতভাবে হেলালকে খুন করে।

তিনি আরও বলেন, ইলিয়াস আরেকটি সিএনজি কেনা-বেচার কথা বলে হেলালকে বোয়ালখালীর ৯ নং আমুচিয়া ইউনিয়নের পোস্ট অফিস সড়ক থেকে একটু ভিতের দুর্গম এলাকার একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে হেলালের সিএনজিকে আরেকটি সিএনজি ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়া সিএনজিতে ছিল ইলয়াসের দুই সহযোগী বখতিয়ার ও মেহেরাজ। তারা সিএনজি থেকে নেমে ইলিয়াসকে এলোপাথাড়ী কিলঘুষি মারে।

সিএনজি বিক্রির কমিশন মেরে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় খুন হন হেলাল 1

আটককৃতদের বরাতে র‌্যাব অধিনায়ক আরও বলেন, বখতিয়ার কাঠ দিয়ে হেলালের মাথার পিছনে আঘাত করে। তারপর ইলিয়াস ছুরি দিয়ে হেলালের মাথা, পিঠে আঘাত করে। এক পর্যায়ে ইলিয়াস হাতুড়ি দিয়ে হেলালের মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তার দুই সহযোগী লাশটি ধানক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যায়। ইলিয়াস হেলালের সিএনজি নিয়ে টেকনাফ নিয়ে বিক্রি করে দেয়। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম ফিরলে নতুন ব্রিজ এলাকায় র‌্যাবের হাতে আটক হয়।

ইলিয়াস (৩৫) বোয়ালখালীর পশ্চিম শাকপুরারর মো. শফিকের ছেলে। মোহাম্মদ বখতিয়ার (২৭), একই এলাকার মোঃ মনু মিয়ার ছেলে। মনির আহম্মদ মেহেরাজ (২৬), মধ্যম শাকপুরার মরহুম আহমেদ ছফার ছেলে।

নিহত হেলাল উদ্দিন চার সন্তানের পিতা ছিলেন। তার স্ত্রী বাদী হয়ে বোয়ালখালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। র‌্যাব আসামিদের বোয়ালখালী থানায় সোপর্দ করেছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।