সীমান্তে আবারও উত্তেজনা, ভেসে আসছে গুলির বিকট শব্দ

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ-মায়ানমারের সীমান্ত এলাকায় বেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মূলত মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জেরে এমন উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাংলাদেশ সীমান্তে। যার ফলে বেশ কয়েকস্থানে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পূর্ব ও দক্ষিণাংশের ওপারে মিয়ানমার সীমান্ত গতকাল রোববার কিছুটা শান্ত ছিল। সারা দিনে কয়েকটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও আজ সোমবার ভোর ৫টা থেকে একের পর এক বিকট শব্দ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। যা পুরো এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এক দিন স্বস্তিতে থাকালেও টেকনাফ সীমান্তের নাফ নদীর তীরে বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপিড়ার বাসিন্দা আলী হোসেন ও বাজারপাড়ার আবদুস শুক্কুর বলেন, সারা রাত কোনো শব্দ পাওয়া যায়নি। তবে সকালে ঘুম ভেঙেছে বিকট শব্দে। তখন এপারের মাটি কেঁপে উঠেছে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের যেমন, তেমন ভয় পেয়ে শিশুদের ঘুম ভেঙেছে। এতে করে নাফ নদীর তীরে বসবাসরত বাংলাদেশিরা আতঙ্কে রয়েছেন। একই এলাকার গৃহবধূ পারুল আক্তার বলেন, ঘটনা হচ্ছে নাফ নদীর পূর্ব পাশে মিয়ানমারের, কিন্তু বিকট শব্দে মাটি কেঁপে উঠছে টেকনাফে। মনে হচ্ছে, ভূমিকম্প হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, নাফ নদীর পূর্ব ও দক্ষিণাংশে রাখাইন রাজ্য। কয়েক দিন ধরে ওই সব স্থান থেকে গুলির শব্দ আসছে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, রাখাইন রাজ্যের মংডুর শহরের পাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই চলছে।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের ওই পাড়ে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশে এলাকায় প্রচুর গোলাগুলি হয়েছে। পাশাপাশি বিকট শব্দে কেঁপে উঠছিল টেকনাফ সীমান্ত। গতকাল সারা দিন মিলে কয়েকটি বিকট শোনা গেলেও প্রায় শান্ত ছিল সীমান্ত। রাতেও কোনো ধরনের গোলাগুলি ও বিকট শব্দ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আজ সকাল থেকে বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্ত

বিজিবি ও কোস্টগার্ড সূত্র জানায়, নাফ নদীর সীমান্তে তাদের টহল জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এক দিন শান্ত থাকার পর আবার আজ সকাল থেকে বিকট শব্দে টেকনাফ সীমান্ত কেঁপে উঠছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তাতে সীমান্তে নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকতে পারে। আমরাও প্রস্তুত আছি।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।