করোনা মহামারিতে দুই বছর বিরতির পর লালদীঘি এলাকায় আজ থেকে শুরু হলো ঐতিহাসিক বৈশাখী মেলা; পসরা সাজিয়েছেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ছোট বড় উদ্যোক্তারা।
আর ঐতিহ্যবাহী খেলার আসর বসবে সোমবার। মাঠের পরিবর্তে এবার লালদিঘীর পাশে বালু দিয়ে বানানো মঞ্চে হবে খেলা।
মেলা ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাটির তৈরি তৈজসপত্র, খেলনা, ফুলদানি ও পুতুল, বেত-কাঠ ও বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র, হাতপাখা, মাছ ধরার পলো, ডালা, কুলো, গাছের চারা, মুড়ি মুড়কি, পাটি আর নানা রকম দেশি ফল নিয়ে হাজার হন উদ্যোক্তারা।
রোববার (২৫ এপ্রিল) বাংলা বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ। ১২ বৈশাখ লালদীঘিতে জব্বারের বলি খেলাকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। অন্যান্যবার মেলা পাঁচ থেকে সাত দিন চললেও এবার মাত্র তিন দিন।
শনিবার বিকালেই লালদীঘির পাড়, সিনেমা প্যালেস ও কে দি রোড এলাকায় পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। মেলার ব্যাপ্তী সিনেমা প্যালেস হয়ে শহীদ মিনার এলাকা ও বোস ব্রাদার্স পর্যন্ত।
জানা গেছে, মেলায় মুড়ি মুড়কি নিয়ে আসেন নগরীর বাকলিয়া ও বলুয়ার দিঘীর পাড়ের ব্যবসায়ীরা। দেশী বিভিন্ন গাছের চারা নিয়ে হাটহাজারী, বাঁশখালী ও সাতকানিয়ার নার্সারি মালিকরা হাজির হন।
টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও শরীয়তপুরের শিল্পীরা আসেন মাটির তৈজসপত্র নিয়ে। তিন পার্বত্য জেলা থেকে আসে ফুল ঝাড়ু। এছাড়াও সীমান্তবর্তী দুই জেলা কুমিল্লা এবং যশোর থেকে আসেন বিভিন্ন আসবাব।
মেলার আয়োজক ‘আবদুল জব্বারের স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি’। কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, প্রতিবারের তুলনায় এবার এখন পর্যন্ত বিক্রেতা এসেছে কম। মাটির তৈজসপত্র, খেলনা আর বাঁশ-বেতের পণ্য নিয়ে বিক্রেতারা এসেছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। মুড়ি মুড়কি, গাছের চারা, ফুল ঝাড়ু এসব পণ্য নিয়ে বিক্রেতারা আসছেন পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে।
মেলা আগে পাঁচ দিনের ছিল। আগে পরে মিলে সাত দিন চলতো মেলা। এবার ঈদ মৌসুম হওয়ায় দূরের উদ্যোক্তরা আসতে অনিহা প্রকাশ করছেন বলে জানা গেছে। তবে মেলার সময় তিন হওয়াটাও একটা কারণ বলছেন অনেকে।
কুমিল্লা থেকে আগত শরীফ হোসেন বলেন, শুরু থেকে মেলা হবে না জানতাম। তাই আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু প্রতিবার আসি। গত দুই বছর মেলা হয়নি। তিন দিনের হলেও আসলাম। গাড়ী ভাড়া গেছে আগের চেয়ে বেশী। দেখা যাক কী হয়।
এদিকে মেলা নির্বিঘ্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে নগর পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগ আন্দরকিল্লা মোড় থেকে বক্সিরহাট-লালদিঘীগামী রাস্তা, জেলা পরিষদ মার্কেট থেকে টেরিবাজার-আন্দরকিল্লামুখী রাস্তা, সিনেমা প্যালেস থেকে কে সি দে রোড হয়ে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত, জহুর হকার্স মার্কেট থেকে বাটা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ রাখছে।
টেরিবাজার ফুলের দোকান থেকে টেরিবাজারমুখী এবং আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ হতে টেরিবাজারমুখী রাস্তাও বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি টেরিবাজার, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাক্তাইমুখী সব ধরণের পণ্যবাহী যানবাহন রাজাখালী দিয়ে প্রবেশ করে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে বের হবে।
প্রসঙ্গত, বদর পাতি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জব্বার সওদাগর চট্টগ্রামের যুবকদের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে লালদীঘি মাঠে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন ১৯০৯ সালে। সেই থেকে প্রতি বছর এই আয়োজন হয়ে আসছে। এবারের খেলায় ১০০ জন বলী অংশ নেবেন। প্রথম স্থান অধিকারী পাবেন ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার ও ট্রফি।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।