পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও বিএনপির গা জ্বালা

আগামী ২৫ জুন আমাদের জন্য অনন্য এক আনন্দের দিন। এদিন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার, আমাদের সক্ষমতার প্রতীক নির্মাণে অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর।

কিন্তু সারা দেশের মানুষ যেখানে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠছে, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে উদ্বোধনের সে শুভ ক্ষণটির জন্য সেখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে বিএনপির গা জালা যেন ক্রমেই বাড়ছে। পাগলপ্রায় বিএনপি এখন আমাদের এ অভূতপূর্ব অর্জন নিয়ে মাঠে ময়দানে এমনকি পবিত্র সংসদেও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে।

তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা সংসদের এ চলতি অধিবেশনে একটি মনগড়া বক্তব্য রাখলেন। তিনি পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আর এটি প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি টেনে আনলেন ভারতের ভুপেন হাজারিকা সেতুর কথা। প্রসঙ্গ টানলেন ভারতের গঙ্গা নদীর উপর নির্মাণাধীন গঙ্গা সেতুর কথা। ওনার কথা বলার ভঙ্গি দেখলে মনে হবে এ যেন সব জান্তা সমশের।

আমার পরিচিত এক মধ্য প্রাচ্য প্রবাসী। প্রায় বিশ বছর আগে তিনি চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁওতে চার কাঠার আর নাসিরাবাদে একটি চার গণ্ডার জায়গা কিনেন। বছর পাঁচেক আগে এ দুই জায়গায় তিনি বাড়ী করার উদ্যোগ নিলেন। দেখা গেল চান্দগাঁও এর জমিতে বাড়ী করতে গিয়ে তাকে পাইলিং এর কারণে অতিরিক্ত এক কোটি বিশ লক্ষ টাকা গুনতে হয়েছে। তাছাড়া তিনি যখন কাজ শুরু করেছিলেন তখন রডের দাম ছিল ৪২ হাজার টাকা আর যখন শেষ হলো তখন রডের দাম এসে ঠেকে ৮১ হাজার টাকায়।

তিনি সেদিন আমাকে বললেন রড-সিমেন্ট ও অন্যান্য জিনিসের মূল্য বাড়ার কারণে এ দুটি ভবন নির্মাণে তার এক কোটি টাকা বেশী খরচ হয়েছে। একই পরিমাণ জায়গার উপর দুটি ভবন নির্মাণ ব্যয়ের পার্থক্য যদি এই হয় তাহলে পদ্মা সেতু নির্মাণের আদ্যোপান্ত জানার পর রুহিন ফারহানার বক্তব্য যে অসার, উদ্ভট তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি ভুপেন হাজারিকা সেতুর কথা বা গঙ্গা সেতুর প্রসঙ্গ টানতেন না। পদ্মা সেতুকে অন্য সেতুর সাথে তুলনা করা চলবে না। এর total নির্মাণ প্রক্রিয়া ও উপকরণ অন্য সেতুর সাথে মিলে না।

পদ্মা বিশ্বের অন্যতম একটি স্রোতস্বীনি নদী। বিশ্বের খরস্রোতা নদীগুলোর মধ্যে আমাজনের পরই এটির অবস্থান। এখানে সেতু নির্মাণ ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। এ সেতুতে নৌ চলাচলের সুবিধার্থে ১৫০ মিটার পর পর একটি পিলার বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতু তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছে মিহি মাইক্রোফাইন্ড সিমেন্ট; যা আমদানি করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। অন্য কোন সেতু তৈরীতে এমন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি।

ফারহানা ভুপেন হাজারিকা সেতুর কথা বললেন। এ সেতুর পাইল লোড আর পদ্মা সেতুর পাইল লোডের মধ্যে ফারাক হাজার গুন। দুই সেতুর এক একটি পিলারের মধ্যেও ফারাক রয়েছে বহুগুন। সব মিলিয়ে হাজারিকা সেতু থেকে পদ্মা সেতু ১৩৩ গুণ বেশী শক্তিশালী।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও বিএনপির গা জ্বালা 1

পদ্মা সেতু তৈরীতে নদীর তলদেশে পাইল পৌঁছাতে যে হেমার লেগেছে তা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হেমার। পৃথিবীর আর কোন সেতু করার জন্য এমন শক্তিশালী হেমার তৈরী করা হয়নি। যা জার্মানি থেকে আনা হয়েছে। রেল ও গাড়ী চলার দ্বিতল সেতু পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকটি। পদ্মা সেতু দিয়ে আমরাও এখন সে গৌরবের অংশীদার হলাম।

শুধু তাই নয় গভীর তলদেশে গিয়ে পাইল গাঁথার একমাত্র সেতু আমাদের এ পদ্মা সেতু। এ পদ্মা সেতু নিয়ে শুরুতেই ষড়যন্ত্রের যেমন অন্ত ছিল না তেমনি বাস্তবায়নের পরও থেমে নেই ষড়যন্ত্রকারীরা।

তাই রুমিন আপারা আবারো নতুন করে জেগে উঠেছেন!গুণীজনরা বলেন কেউ মিথ্যা বললে তার চোখেমুখে বুঝা যায়। কিন্তু ইনি মিথ্যা বলেন অবলীলায় যেন আমরা বুঝতে না পারি। আফ্টার অল ব্যারিস্টার বলে কথা। ভাবভঙ্গিও এমন যে তিনি অনেক কিছুই জানেন এবং বুঝেন।

আরে দুর্নীতির ধোঁয়া তুলে ষড়যন্ত্র করে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়ন বন্ধ করছিলেন। শত শত চিঠি চালাচালি করেছিলেন। বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় আপনারা উল্লাস করেছিলেন। কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও আপনাদের শিক্ষা হলো না। শিখেননি সত্যকে মেনে নিতে।

কিন্তু আপনারা বুঝতে পারেননি আমাদের যে একজন শেখ হাসিনা আছেন। আর তিনি ছিলেন বলেই তিনি নাকে হ্যাঁ করলেন; অসম্ভবকে করলেন সম্ভব। দেশের টাকায় পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিলেন তিনি পারেন এবং করেন। তার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত।

বঙ্গবন্ধু যেমনি আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত গরীব দেশকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁরই কন্যার হাত ধরে আজ আমার বাংলাদেশ শির উঁচিয়ে সোৎসাহে বলে উঠছে দেখো আমরাও পারি।

আজ ভারত-পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে পদ্মা সেতু নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। আর তাতেই রোমিনদের গা জ্বালা বেড়ে গেছে বহুগুণ। গা জ্বালা দেখিয়ে লাভ নেই। এ দেশের মানুষ জানে আপনাদের সকল অতীত, খাম্বা তারেকের কথা। দুর্নীতিতে দেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা এ’ দেশের মানুষ এখনও ভোলেনি।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই খাম্বা স্থাপনের কথা আমরা ভুলিনি। বিদ্যুতের দুরাবস্থার সে বাংলাদেশ আজ আলোয় ঝলমল বাংলাদেশ। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। আজ পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ব পরিমণ্ডল আবারো ম্যাসেজ পেলো বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশ দমবার নয়।

শুধু প্রয়োজন ছিল লিডারশিপের। শেখ হাসিনার লিডারশিপ সেটিই প্রমাণ করিয়ে দিলো। তাই আমার এক বন্ধু আলাপচারিতার এক পর্যায়ে বলে উঠলো আরে রুমিন ফারহানাকে বলো আগে ইলিশ আর পোয়া মাছের পার্থক্য বুঝতে। দুটিতোই মাছ। কিন্তু স্বাদে আর দামে ফারাক অনেক।

আমি বললাম বিএনপির লোকেরা এগুলো বুঝে না। আর বুঝবেও না। চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। এ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার সূচনা হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঊনিশ জেলার সাথে সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগ স্থাপন হবে হবে। রুমিনরা এগুলো দেখবেন না। যাক সে সব কথা।

আজ হৃদয়ের গভীর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাই অতল। তাঁর হাত থেকে কোন অবস্থাতেই এ শ্যামল মৃত্তিকা যেন ছিটকে না পড়ে। তাঁহাতেই নিরাপদ আমাদের প্রিয় স্বদেশ। তার ভাবনাতেই আমাদের এগিয়ে চলা, আমাদের সমৃদ্ধি।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু ।
জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক- দপ্তর সম্পাদক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।