রান্নাঘরে গ্যাস নেই—জেনে নিন রান্নার বিকল্প উপায়

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালিতে অবস্থিত দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় শনিবার থেকে চট্টগ্রাম নগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা গেছে। গ্যাস না থাকায় খাবারের দোকানে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আর এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ১৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে টানা ৩-৪ দিন কিনে খাবার খাওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার হোটেলের খাবারে অনেকের শারীরীক সমস্যাও হয়ে থাকে। তাই বিকল্প উপায়ে ঘরে খাবার তৈরির দিকে ঝুঁকছে নগরবাসী। চলুন জেনে নেই গ্যাসের বিকল্প উপয়ে রান্নার পদ্ধতি সম্পর্কে—

মাইক্রোওয়েভ

আজকাল অনেকের বাড়িতেই মাইক্রোওয়েভ থাকে। মাইক্রোওয়েভে শুধু খাবার গরম না করে রোজকার রান্নাও করতে পারেন। তাহলে গ্যাসের খরচ ও সংকট থেকে মুক্তি পাবেন। এটির মাধ্যমে যেমন রান্না তাড়াতাড়ি হয় তেমনি পুষ্টিগুণও ভালো থাকে।

মাংস যেমন মাইক্রোওয়েভে ভালো রান্না হয়, তেমনি মাছও খুব ভালো হয়। এমনকি পোলাও খুব তাড়াতাড়ি ঝরঝরে রান্না করা যায়। এছাড়া শুকনো রান্না, সেদ্ধ করা, বেক করা বা রোস্ট করা সহজেই সম্ভব। যেহেতু এই যন্ত্রে রেডিয়েশন দিয়ে খাদ্যকণা ভেঙে দেওয়া হয়। তাই তাড়াতাড়ি যেকোনো খাবারই সেদ্ধ করা যায়। বেকিং, রোস্টিং বা যেকোনো ভাপা রান্না করার জন্য মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করা যায়। মাইক্রোওয়েভ যেকোনো রান্নায় তেল কম লাগে। তাই মাইক্রোওয়েভে রান্না করার সময় স্টিল বা অন্য কোনো ধাতুর থালাবাসন ব্যবহার না করা ভালো। ওভেনপ্রুফ লেখা থাকলেও প্লাস্টিকের বাসন না ব্যবহার করাই ভালো। কতটা তাপমাত্রায় রান্না করছেন, খেয়াল রাখতে হবে। সব খাবার কিন্তু হাই-টেম্পারেচারে রান্না করা যায় না। রান্নার মাঝখানে ৫ মিনিট পর বন্ধ করে দরজা খুলে একটু নেড়ে আবার চালু করে দিতে পারেন। এভাবে যেকোনো রান্না মধ্যখানে দেখে নিতে পারেন। রান্নায় পানির পরিমাণ মাথায় রাখতে হবে। খুব বেশি পানি দিলেও উপচে পড়তে পারে। কম পানি দিলেও চলবে না। কারণ মাইক্রোওয়েভে যেকোনো খাবার দ্রুত শুকনো করে দেয়। কোন খাবার কতক্ষণ ধরে রান্না করবেন বিষয়টি জানতে হবে। সব রান্নার জন্য একই রকম সময় লাগে না।

ইন্ডাকশন, ম্যাগনেট বা ইনফ্রারেড চুলা

ইন্ডাকশন চুলায় বিশেষ এক ধরনের টেম্পার্ড গ্লাসের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক তাপপ্রবাহে রান্না হয়। কিন্তু আগুন জ্বলে না। রান্না সহজ ও নিরাপদ। সব ধরনের রান্না করা যায়। তাপমাত্রা বাড়ানো ও কমানো যায়। প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ মাত্র এক ইউনিট। টাইমার থাকায় রান্না বসিয়ে অন্য কাজও করতে পারবেন। রান্না করার সময় চুলার আশপাশে খাবার পড়লে পুড়ে যায় না। কারণ, চুলার অন্যান্য অংশে তাপপ্রবাহিত হয় না। চুলা পরিষ্কার করাও সহজ। চুলার তাপ চারদিকে সমানভাবে ছড়ায়। ফলে গ্যাসের চুলার থেকে এই চুলায় কম সময়ে রান্না করা যায়।

ইন্ডাকশন চুলার ধরন দুই রকম। এক ধরনের চুলায় রান্না করতে অ্যালুমিনিয়াম বা কাচের পাত্র ব্যবহার করা যায় না। রান্না করতে স্টিল বা লোহাজাতীয় পাত্র ব্যবহার করতে হয়। আরেক ধরনের চুলায় সব ধরনের পাত্রই ব্যবহার করা যায়। ইন্ডাকশনে রান্না করতে পাত্রের তলা সমান হতে হয়। নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে আগুনের মতো তাপ ছড়ায় না। হাত পুড়ে যাওয়ার ভয় নেই। সহজেই বহন করা যায়। গ্যাসের চুলার মতোই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

রাইস, কারি কুকার

রাইস, কারি কুকারকে ঠিক চুলা বলা যায় না। এগুলো হাড়ি ও চুলার সংমিশ্রণ। রাইস, কারি কুকার বৈদ্যুতিক চুলা তবে চুম্বকের জায়গায় কয়েল ব্যবহার করা হয়। এই চুলার সঙ্গে নির্দেশিকা দেওয়া থাকে, যা দেখে খুব সহজেই এর ব্যবহার জেনে নেওয়া যায়। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রাইস ও কারি কুকার পাওয়া যায় অল্প টাকার মধ্যে।

কেরোসিন-গ্যাস স্টোভ

সিংগাড়া পুরি চায়ের দোকানে এখনো গ্যাস স্টোভের ব্যবহার হয়। দামেও সস্তা। গ্যাস স্টোভ বললেও আগুন জ্বলে কেরোসিন আর বাতাসের সংমিশ্রণে। ১ লিটার কেরসিন তেল ভরে নিলে বেশ করে রান্না করা যায়। বিপদের সময় স্টোর রুম থেকে বের করে নিরাপদ জায়গায় রেখে চালু করে নিন। রান্না শেষে ভালো করে নিভিয়ে আবার স্টোর রুমে রেখে দিন।

সাথী চুলা

অনেকেই এই নামটির সঙ্গে পরিচিত নয়। হ্যা, সাথী চুলা বলতে গ্রাম বাংলার বহুল ব্যবহৃত মাটির চুলার কথা বলছি। তবে এটি সনাতনী মাটির চুলা নয়। সাথী চুলা বিশেষ নকশায় তৈরি করা মাটির চুলা যেখানে আগুনের তাপের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয় এবং ধোঁয়া বিশেষভাবে স্থাপন করা নল দিয়ে বের হয়ে যায়। বাড়ির ছাদে বা উন্মুক্ত কোনও জায়গায় স্থাপন করে নিন। বিপদের বন্ধু হিসাবে সাথী চুলায় রান্না করতে করতে হারিয়ে যান গ্রাম বাংলার চিরায়ত অতি সাধারণ জীবনযাত্রায়। শহুরে জীবন থেকে ক্ষনিকের জন্য ফুরসতও পাবেন।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।