আনোয়ারায় ১৮ ও কর্ণফুলীতে ১৩ বছর পর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

দুই উপজেলায় উৎসবের আমেজ

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় দীর্ঘ দেড় যুগ পর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শনিবার (১০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এদিকে দীর্ঘ ১৩ বছর পর কর্ণফুলীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত কাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।

ইতোমধ্যে সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ। সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলার সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সম্মেলন উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।

কর্ণফুলীর সম্মেলনস্থল বড়উঠান ইউনিয়নের ফকিনীর হাট এলাকার সড়ক ও আনোয়ারা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।

সম্মেলনের মাধ্যমে কারা আসছেন নেতৃত্বে এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রণি, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদের নাম আলোচনায় রয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আমির আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন হায়দার, শিকলবাহা ইউনিয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম ফোরকান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোলায়মান তালুকদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহেদুর রহমান শাহেদ, চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমদ রাজার নামও রয়েছে আলোচনায়।
আনোয়ারায় ১৮ ও কর্ণফুলীতে ১৩ বছর পর আওয়ামী লীগের সম্মেলন 1

অপরদিকে দীর্ঘ ১৮ বছর পর সম্মেলনের মাধ্যমে হতে যাচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি। সম্মেলনকে সফল করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য এস.এম আলমগীর চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য সম্মেলন প্রস্ততি কমিটি ও পাঁচটি উপ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রস্ততি কমিটি গঠনের পর থেকে সম্মেলনকে সফল করতে ব্যস্ততম সময় কাঠাচ্ছে কমিটির সদস্যরা।

এদিকে সম্মেলনকে সামনে রেখে সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করেছেন ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব রিদুওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে দুই উপজেলার সম্মেলন স্থান পরিদর্শন করেন তিনি।

সম্মেলনের যাবতীয় কার্যক্রম মনিটরিং করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম.এ মান্নান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম.এ মালেক ও সিনিয়র সদস্য ভূমিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব রিদওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম।

এদিকে কমিটিতে স্থান পেতে জোর লবিং চলছে। সেইসাথে চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাও। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে নানা ভাবে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় নেতা কর্মীরা পছন্দের প্রার্থীর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও ব্যানার দিয়ে সমর্থন জানিয়ে দিচ্ছে।

তবে সবার দৃঢ় বিশ্বাস কাউন্সিলারদের মতামতের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দসহ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি নেতা নির্বাচন করবেন।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী শনিবার আনোয়ারা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রায় দীর্ঘ ১৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। এতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপিসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্মেলনে সভাপতি পদে উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী, বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরী, সহ সভাপতি এসএম আলীমগীর চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমএ মালেক, ফজলুল করিম চৌধুরী বাবুল ও নোয়াব আলী, মো. ইয়াছিন হিরু, সুগ্রীব মজুমদার দোলন ও উপজেলা শ্রমিকলীগের দুইবারের সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, অনেকদিন পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীরা চাঙা। তবে দলের নেতা কর্মীরা ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসুক এটাই তাদের প্রত্যাশা।

সম্মেলন প্রস্ততি কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য এসএম আলমগীর চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। তবে যে কোন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেবেন আমাদের অভিভাবক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে বাহাউদ্দিন খালেক শাহজীকে সভাপতি ও কাজী মোজামম্মেল হককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। এরপর কাজী মোজাম্মেল হককে সভাপতি ও অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক, সর্বশেষ অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরীকে সভাপতি ও এমএ মালেককে সাধারণ সম্পাদক করে দুইটি কমিটি দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ সম্মেলন ছাড়া অনুমোদ দেন।

নাম প্রকাশ্যে অনুচ্ছিক নেতাকর্মীরা জানান, সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কর্ণফুলী আওয়ামী লীগে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা খুব কম। থাকবে না কোন নতুন নেতৃত্বের চমকও। তবুও ধারাবাহিকতার সম্মেলনে কে হচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড পর্যন্ত লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। এ লক্ষে ইতিমধ্যে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান তারা।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ৫ ইউনিয়নের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভোটে মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি ও হায়দার আলী রণিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন। ২০১০ সালে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে ৫ ইউনিয়নে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সৈয়দ জামাল আহমেদকে সভাপতি হায়দার আলী রণিকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। এডহক কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চললেও পূর্ণাঙ্গ করতে সে সময়ে বেগ পেতে হয় উপজেলা আওয়ামী লীগকে। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে ৫ ইউনিয়নে নতুন কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

২০১৮ সালে নতুন উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। কমিটিতে ফারুক চৌধুরীকে সভাপতি ও হায়দার আলী রণিকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী।

তিনি বলেন, সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দলকে গতিশীল করার লক্ষে নতুন নেতৃত্বে যারাই আসবেন সবাইকে নিয়ে মিলে মিশে কাজ করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির হাতকে শক্তিশালী করতে।

অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের সবস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্য ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরগরম করে তুলেছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।