টানা ছুটি পেয়ে কক্সবাজারে ভিড় করছেন পর্যটকরা

শীত এলেই যেন জেগে ওঠে কাব্যিক মন। শীতের আরামদায়ক আবহাওয়া, কুয়াশা মোড়ানো বিকেল, শিশিরস্নাত সকাল—সৃষ্টি করে এক মোহময় আভা। এ সময় মানব মনে জেগে ওঠে ভ্রমণের এক অদ্ভুত নেশা। জাগতিক ব্যস্ততার কাছে হার মেনে, মনের সাথে বিরোধীতা করে, মানুষকে প্রতিনিয়ত ডুবে থাকতে হয় কাজে। তবে একটু যদি সুযোগ মেলে তা কি ছেড়ে দিবে ভ্রমণপ্রেমিক? মোটেও না। সাপ্তাহিক ছুটি, বড়দিনের উৎসব সব মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে এখন কক্সবাজার ছুটছে পর্যটকরা। অগ্রিম বুকিং দেওয়া হয়েছে হোটেল । সব মিলিয়ে কক্সবাজারে এখন ঢল নামছে পর্যটকের।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলেছে আগের থেকে বেশি পর্যটকের। টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের ভালো সাড়া পেয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ব্যাবসায়ীরাও।

সরজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে কক্সবাজারে প্রবেশ করছে অসংখ্য পর্যটক। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা এসব পর্যটকদের কেউ কেউ এসে অবস্থান করছেন হোটেলে আবার কেউ কেউ বেরিয়েছেন শেষ বিকেলে জলের সাথে সূর্য ডোবার দৃশ্য দেখতে। হোটেলগুলোতেও চলছে ব্যস্ততা। তাছাড়া সড়কের পাশে, বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসেছে শীতকালীন পিঠার ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকানে শীতের পিঠা তৈরি করছেন চল্লিশোর্ধ্ব কোন নারী বা কিশোর বয়সী কোন ছেলে। পর্যটকরাও ধোঁয়া ওঠা এসব পিঠা এড়িয়ে যাচ্ছেন না।

কয়েকটি হোটেল ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হোটেল পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। কক্ষ পেতে ব্যাগপত্র নিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে ছোটাছুটি করতেও দেখা যায় বেশকিছু পর্যটককে। হোটেলের স্টাফদেরও চলছে দারুণ ব্যস্ততা। পর্যটকদের রুমে পৌঁছে দিতে, অভ্যর্থনা জানাতে একটুও কার্পণ্য করছেন না তারা।
হোটেল মালিকরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে। তাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছে। এছাড়া রাতের বেলা ভিড় আরও বাড়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

এদিকে শীতের মৌসুমে কক্সবাজার বেড়াতে এসে বেশ উৎসাহ প্রকাশ করেছেন পর্যটকরা। ঢাকা থেকে আসা সাফায়েত কবির নামে এক সরকারি চাকুরিজীবী বলেন, অফিসের জন্য আর বন্ধ পাওয়া যায় না। চাকরির বয়স দুই বছর, বিয়ে করেছি প্রায় ৬ মাস আগে। ছুটি পেয়ে চিন্তা করলাম একটু বেড়ানো মন্দ না। তাই চলে এসেছি কক্সবাজার। আশা করছি ভালো সময় কাটবে।

ময়মনসিংহ থেকে আসা নাজনীন সুলতানা নামে আরেক পর্যটক বলেন, আমরা পরিবারের ৪ জন কক্সবাজার এসেছি। বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ সাথে এখন অফিসও ছুটি- সবমিলিয়ে ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তাই সুযোগ হাতছাড়া করি নি।

এদিকে পর্যটন মৌসুমে বিনোদন-প্রেমিদের চাপ বাড়ায় প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নয়, পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, পাথুরে সৈকত ইনানী, হিমছড়ি ও রামু বৌদ্ধ মন্দির, মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরেও।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, কিছুদিন ধরে আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। এতে হতাশায় ভুগছিল পর্যটক ব্যবসায়ীরা। টানা তিনদিনের ছুটিতে পুরো কক্সবাজারে সব হোটেল বুকিং হয়েছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য কল দিচ্ছে তারপরও আমরা তাদের রুম দিতে পারছি না।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার বলেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তাই আমাদের টুরিস্ট পুলিশের একাধিকও টিমও কাজ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময়ই সজাগ আছি।

কক্সবাজার পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় মাঠে আছি। খাবার থেকে শুরু করে সবকিছু দাম নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি ।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।