টেকনাফে চবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ক্যাম্পাসে মানববন্ধন

টেকনাফে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের পর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে চারদফা দাবি জানানো হয়।

দাবিসমূহ হলো:
১. এই ঘটনার সাথে জড়িত জাহাজের স্টাফ সন্ত্রাস বাহিনীকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।
২. বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজের লাইসেন্স আজীবনের জন্য বাতিল করতে হবে।
৩. বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজ কর্তৃপক্ষের মিথ্যা ও বানোয়াট স্টেটমেন্ট প্রত্যাহার পূর্বক লিখিত মুসলেকা দিয়া নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. জাহাজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জান-মালের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মোসাদ্দেকের সঞ্চালনায় সুমাইয়া রাজা রূহানী বলেন, ওখানে আমাদের কোনো ভুল ছিল না। আমরা কোনো ঝামেলা তৈরি করতে চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের বুকিং দেয়া সীটে আমাদের সবাই না বসলেও অন্তত যাদের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল তাদেরকে সীটে বসাতে। সেখানে আমাদের ওপর বে ক্রুজ-১ জাহাজের স্টাফ ও স্থানীয় লোকজন মিলে দুই দফায় হামলা করে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কেন, দেশের কোনো নাগরিকই এ ধরনের ঘটনা আশা করে না। আমরা আজকের এই মানববন্ধন থেকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানাচ্ছি। বে ক্রুজ-১ জাহাজের সব ধরণের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে এটা আজকের মানববন্ধরের মূল দাবি।

মোসাদ্দেকুল ইসলাম বলেন, আমাদের ওপর যে হামলা করা হয়েছে সেটা অবশ্যই পরিকল্পিত। আমাদের ওপর যখন জাহাজের স্টাফ এবং স্থানীয়রা হামলা চালাচ্ছিলেন তখন বিজিবিসহ প্রশাসনের অন্যান্য লোকেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই মারধরকারীদের আটকানোর চেষ্টা করেননি। তারা সেখানে উল্টো তামাশা দেখছিলেন। বে ক্রুজ-১ জাহাজের মালিক যে বাহাদুর সে ওখানকার জাহাজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সে কারণেই প্রশাসন দেখেও কোনো কিছু করেনি। আমাদের দাবি ওই রুটে বে ক্রুজ-১ জাহাজটি যাতে আর চলাচল করতে না পারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

টেকনাফে মারধরের শিকার হওয়া অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আফতাব হোসেন বলেন, আমরা সেখানে কোনো প্রকার ঝামেলা করতে যাইনি, বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঝামেলা তৈরি হওয়ার পরও আমরা চাচ্ছিলাম যে মাথা ঠান্ডা রেখে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথাতে কর্ণপাত করেনি। এক পর্যায়ে আমাদের ওপর পর পর দুইবার অতর্কিত হামলা করা হয়। এটা শুধুমাত্র আমাদের ওপর হামলা নয়। এটা মূলত দেশের স্বাধীনতা যে মূল্যবোধ তার ওপরে হামলা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনের যে নীরব ভুমিকা ছিল তা আসলেই আমাকে শঙ্কিত করেছে। তারা কেন এমন আচরণ করেছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এসময় তিনি বে ক্রুজ-১ জাহাজের সকল স্টাফকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ওই জাহাজের সব ধরণের লাইসেন্স বন্ধ করার দাবি জানান।

অধ্যাপক ড. আবুল হোসাইন বলেন, আজকে আমরা বিভাগের অভ্যন্তরীণ কমিটির মিটিংয়ে দুইটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা ও আরেকটি হল হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। আসলে যতই ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক না কেন, ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা কোনোভাবে পুরণ করার মতো নয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ ঘটনায় বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।

মানবন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন মজুমদার, প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম, প্রফেসর ড. তারিকুল হাসান চৌধুরী, প্রফেসর ড. এ. এইচ. এম. সেলিমুল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক মল্লিকা রায়, সহকারী অধ্যাপক ফজলে রাব্বি চৌধুরী, প্রভাষক খালেদা বেগম মাইফুল ও ফাতেমা আক্তার হিরামনি।

প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে সেন্টমার্টিন জেটিঘাট ও টেকনাফ জেটিঘাটে পরপর দুই দফা জাহাজ স্টাফ ও স্থানীয় লোকদের হাতে হামলার শিকার হন চবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।