পাহাড়, লেক, সবুজ বৃক্ষরাজির সাথে মানবসৃষ্ট কৃত্তিম সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে এক অপরূপ জনপদ রাঙামাটির লংগদু। এই এলাকার বাঁকে বাঁকে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র। মাথার ওপর নীল পাহাড়, সমতলে বয়ে চলা শান্ত হ্রদ এই এলাকার পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করেছে। এই রকমই একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়াভিরাম ‘বৈচিত্র্য বিলাস’ পার্ক। প্রতি ঋতুতে লংগদু বিভিন্ন রূপে বৈচিত্রময় হয়ে উঠে বলে এই লেকে গড়া এই পর্যটনকেন্দ্রটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বৈচিত্র্য বিলাস’।
রাঙামাটির লংগদুতে উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে লংগদু জোনের মাইনীমূখ আর্মি ক্যাম্পে অবস্থিত এই পর্যটনকেন্দ্রটি। উপজেলা সদর ও বৃহত্তর মাইনী বাজারের নিকটে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দর্শনার্থীরা এখানে ছুটে আসেন। দৃষ্টিনন্দন এই পার্কে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, বৃক্ষবাড়ি, চাকমা কুটির, মঞ্চ ও গ্যালারি, রাবার বোট, ভাসমান রেস্টুরেন্ট, মিনি ক্যান্টিন, পানির ফোয়ারা, বাচ্চাদের খেলাধুলার সামগ্রী এবং রাত্রি যাপনের সুব্যবস্থা।
সরজমিনে দেখা গেছে, পার্কের ভেতর নানা রকমের ফুলের গাছে প্রজাপতির ছোটাছুটি করছে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পার্কে করা হয়েছে নানা রকম পশুপাখির ভাস্কর্য, রয়েছে দোলনাও। এছাড়া বিশ্রামের জন্য রয়েছে ছোট-বড় বিশ্রামাগার। পার্কে প্রবেশের আগে চোখে পড়বে নান্দনিক কারুকাজে সজ্জিত শৈল্পিক প্রধান ফটক। রয়েছে বোটে চড়ে নদী দেখার সুযোগ, যা এই এরলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এই পার্কে প্রতিদিনই পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবসহ ঘুরতে আসছে শতশত দর্শনার্থী এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শিশু কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের জন্য পার্কটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ঘুরতে আসা রুপায়ন চাকমা নামে একজন বলেন,পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পার্কের টিকিট কাউন্টারের সৈনিকদের সাবলীল ব্যবহার সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে।
উপজেলাবাসীর বলছেন, দৃষ্টিনন্দন এই পার্কটি পূর্ণাঙ্গভাবে নির্মাণ করলে শুধু লংগদু উপজেলায় নয় পাশ্ববর্তী জেলা ও উপজেলার মধ্যে একটি অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পাবে।
লংগদু প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক আরমান খান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লংগদু জোনের তৎকালীন জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল আলীম ঐতিহ্যবাহী এই স্থানটিকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করতে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই অনন্য। এখানে অবস্থিত বৈচিত্র্য বিলাস একটি নান্দনিক, শৈল্পিক ও আইকনিক স্থাপনা। সেনাবাহিনীর এই মহৎ উদ্যোগের জন্য সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছে।
লংগদু জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল হিমেল মিয়া বলেন, ২০১৮ সালে আমাদের পার্কের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বর্তমানে যা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আমরা দেখেছি সাধারণ মানুষ যখন সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে তারা ভালো পরিবেশ পায় না। আমরা শুধু একটু পরিবেশ করে দিয়েছি। সামনে পার্কের উন্নয়নে আরো কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অবদান রাখছে। তেমনি পর্যটন শিল্পেও সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।