ফটিকছড়িতে মাদক মামলার প্রতিশোধ নিতে ১০ গরু লুটের অভিযোগ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে রাতের আঁধারে গোয়ালঘর থেকে ১০টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চক্র। গত রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসইন্যারখীল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লুট হওয়া গরুর মধ্যে সাদা-কালো রঙের ৪টি গাভী, লাল রঙের ৬টি ষাড় গরয়েছে। এসব গরুর অনুমানিক মূল্য ১৭ লাখ টাকা বলে দাবি মালিকপক্ষের।

এদিকে স্থানীয় ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য ইব্রাহিম প্রকাশ ইবুর নেতৃত্বে এসব গরু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন খামারি মাফিয়া বেগম ও তার ছেলে ইউছুফ। খামারির ছেলে বলেন, গত ৯ আগস্ট কুমিল্লার চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ৩ হাজার ৮৭০ পিস ইয়াবাসহ আল আমিন শেখ নামে এক ইয়াবা পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া আল আমিন শেখ জানান, আটক ইয়াবাগুলো ইব্রাহিম প্রকাশ ইবু তাকে বিক্রির জন্য দিয়েছে। ইবুর সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব ইয়াবা বিক্রি করে আসছেন। এছাড়া ইবুর নামে কক্সবাজারে একটি ডাকাতির মামলাও হয়। এই দুই ঘটনার ইবু আমাকে সন্দেহ করে। এরই জের ধরে ক্ষিপ্ত হয়ে ইবু ও জামাল পরিকল্পনা করে আমাদের খামারের ১০টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গরু লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় জনতার ধাওয়ায় উপজেলার শান্তিরহাট বাজারের দক্ষিণে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় গরু লুটকারী দলের সদস্যরা। ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেলটি সংঘবদ্ধ গরু লুটকারী দলের সদস্য জামালের বলে জানা গেছে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল মোতালেব মেম্বার মোটরসাইকেলটি ভূজপুর থানায় হস্তান্তর করেন।

খামারি মাফিয়া বেগমের ছেলে ইউছুফ জানান, রোববার দিবাগত রাতে তাদের খামার থেকে ১০টি গরু লুট করে নিয়ে যায় ইবু ও জামালের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। এক রাতে ১০টি গরু লুটের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নিজের খামারের এতগুলো গরু একসাথে লুটের পর দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারি মাফিয়া।

এ ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনের নামে ভূজপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন খামারি মাফিয়া। অভিযুক্তরা হলেন ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি জাগির হোসেন এবং জামাল, ইবু, সবুজ ও কামরুল।

থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগে খামারি মাফিয়া বেগম উল্লেখ করেন, প্রতিদিনের মত খামারের কেয়ারটেকার মো. আলমগীর গরুগুলোকে পরিচর্যা করে রাতে দরজায় তালা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফজরের নামাজের পর কেয়ারটেকার আলমগীর ঘুম থেকে উঠে দেখে গোয়াল ঘরের দরজার তালাকাটা, ঘরে গরু নেই। তখন তিনি বিষয়টি সাথে সাথে খামারি মাফিয়াকে ফোনে অবহিত করেন। ঘটনার সময় খামারি মাফিয়া কুমিল্লায় ছিলেন। এরপর তারা সকালে এলাকায় এসে গরুর খোঁজ করতে থাকে। দুপুরে লুট হওয়া গরু থেকে একটি গরু নারায়নহাট ইউনিয়নের শ্বেতছড়া হরিনমারা এলাকায় পাওয়া যায়। পরে স্থানীয়রা এটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

তবে গরু লুটের বিষয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জাগির হোসেন বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এ ঘটনার বিষয়ে তিনিও বিস্মিত। স্থানীয় একটি চক্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত তার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনিও এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে লুট হওয়া গরু উদ্ধারের দাবি জানান।

এদিকে এ ঘটনার পর ভূজপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ভূজপুর থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মনির বলেন, গরু লুটের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।