বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন, আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে উৎসবের আমেজ

দীর্ঘ ২ যুগ পর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে তার আগমনকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীসহ আনোয়ারা-কর্ণফুলী এখন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এখানকার মানুষ। আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার চট্টগ্রাম সফরে আসছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের কেইপিজেড মাঠে চলছে জনসভায়স্থল তৈরীর কাজও। স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বডুয়াসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করেছে এটি। ওইদিন আনোয়ারা প্রান্তে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম নগরীর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির বাসায় আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাতে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম.এ মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান তালুকদারের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ভূমিমন্ত্রী আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা, উপজেলা, পাড়া-মহল্লায় প্রতিটি এলাকা প্রচারণা ও চট্টগ্রামসহ দেশের উন্নয়নের বর্ণাঢ্য প্রচারের জন্য সকলস্তরের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার, তা আজ বাস্তবায়নের পথে। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পে।

দেশের অনেকেই আছেন যাদের কখনও ধারণা ছিলনা টানেল সম্পর্কে। কিন্তু সেই টানেলই এখন বাস্তব বাংলাদেশে। একসময় বাংলাদেশের গায়ে লেগে থাকা তলাবিহীন ঝুঁড়ির তকমা অনেক আগেই ঘুচেছে। স্বপ্ন দেখা যেখানে অবাস্তব ছিল, সেই স্বপ্নই যেন এখন চাইলেই ছুঁয়ে দেখা যায়।নদীর তলদেশ ফুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ও তেমন একটি স্বপ্নের নাম।

নদীর তলদেশে চলবে দ্রুত গতির গাড়ি। এ টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে অন্তত ৫০ কিলোমিটার। আসবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সাশ্রয় হবে জ্বালানি, বাঁচবে সময়। সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি। ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর সড়কের আইল্যান্ড এবং টানেল গোলচত্বর রঙে-রঙে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। জনসভাকে ঘিরে আঞ্চলিক সড়ক গুলোতে কার্পেটিং এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। দলের নেতা কর্মী ও স্থানীয়দের মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ।

দেশের প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রাম বর্ণিল সাজে সাজছে। সড়কের আশপাশ এলাকায় চলছে রংয়ের কাজ। ইতিমধ্যে ২৮ অক্টোবরের ক্ষণগণনা শুরু করেছে চট্টগ্রামবাসী। দলেরনেতা কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দের শেষ নেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত, পাড়া মহল্লা ও হাট-বাজারে চলছে টানেল নিয়ে আড্ডা।চট্টগ্রামের মানুষ সর্বদলীয় ভাবে পালন করতে চাই টানেল উৎসব। প্রতিদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্থান পরিদর্শনে আসছে সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুর হক চৌধুরী ও কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, চীনের সাংহাই নগরীর মতো “ওয়ান সিটি টু টাউন” মডেলে গড়ে ওঠা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে আমরা টানেল উৎসব পালন করব। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রস্তুত।

২৮ অক্টোবর আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের কেইপিজেড মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরের উন্নয়ন জনগণের মাঝে তুলে ধরা হবে। উন্নয়নের মধ্যদিয়েই জনগণ সরকারের মূল্যায়ন করবেন। সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে।

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেন, ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারা ওয়ান সিটি টু টাউনের দ্বার উম্মোচন করবেন। নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় মানুষের ঢল নামবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।