বঙ্গবন্ধু টানেল: যোগাযোগ-অর্থনীতিতে সোনালী আলোকরশ্মি

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কেবল বন্দরনগরীর সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সংযোগ স্থাপন করবে না, একইসঙ্গে তা আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় উপশহর গড়ে তোলার দুয়ারও খুলে দেবে। এখন কেবল ক্ষণিকের অপেক্ষা, রাত পেরুলেই উন্মোচিত হবে বাংলাদেশের বড় উন্নয়নের স্বপ্নদ্বার ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। উদ্বোধনের পর স্বপ্নের টানেলে ছুঁটবে যানবাহন। এই স্থাপনা এখন জানান দিচ্ছে অপার সম্ভাবনার। টানেলকে কেন্দ্র করে দক্ষিণের দ্বার খ্যাত আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ জনপদে নেয়া হবে আধুনিক সব বাণিজ্যিক উদ্যোগ। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের, সুযোগ তৈরি হবে আত্মকর্মসংস্থানের। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের জনপদের এ উপজেলায় নতুন প্রাণসঞ্চার এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। অর্থনৈতিক মুক্তির টানেলকে ঘিরে নতুন স্বপ্নে বিভোর এলাকাবাসী।

টানেলকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন ঘুরে দাঁড়ানোর। স্বপ্নের টানেল চালু হলে খুলে যাবে অমিত সম্ভাবনার দ্বার। চলাচলে আসবে গতি, বাড়বে প্রবৃদ্ধি-এমনটাই আশাবাদ আনোয়ারার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। সুযোগ হবে কর্মসংস্থানের, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।টানেলকে ঘিরে পাল্টে যাবে জীবনমান। আর এতেই খুশিতে আত্মহারা দক্ষিণ চট্টগ্রামের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বহুল কাঙ্ক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামীকাল ২৮ অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারার কাফকো কলোনি সংলগ্ন মাঠে জনসভায় অংশ নিবেন। ওই সমাবেশে ১০ লাখ লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সেখানে তুলে ধরা হবে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড-ও। এ সমাবেশ ঘিরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। দীর্ঘ দুই যুগ পর প্রধানমন্ত্রীর আগমনে নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ বেশ উৎফুল্ল। এরই মধ্যে পোস্টার, লিফলেট ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সব উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে।

এইদিন টানেল উদ্বোধনের পাশাপাশি আরও ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী টানেলসহ ১৭টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং তিনটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেল ছাড়া চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ টাওয়ার, রাঙ্গুনিয়া ও আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবন, বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, শিকলবাহা খালের ওপর পিসি গার্ডার ব্রিজ, ডিসি পার্ক, হাজার বছরের নৌকা জাদুঘর, ১৯১টি ইউনিয়নে খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস ও পর্যটক বাস, রিভার ক্রুজ ও ফুল ডে ট্যুর সম্বলিত পর্যটন সেবা, বার্ডস পার্ক ও চিড়িয়াখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করবেন।

এ ছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণ, বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সড়ক এবং সিমেন্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের।

কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, জনসভা ও আশপাশের এলাকায় সরকারের টানা মেয়াদে হওয়া মেগা প্রকল্পের প্রচারণা চালিয়ে বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, স্মার্ট বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা ইত্যাদি তথ্যচিত্র জনসভায় তুলে ধরা হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর হাত ধরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয় শহরের সঙ্গে লাগোয়া উপজেলা কর্ণফুলী ও আনোয়ারায়। তার মৃত্যুর পর তারই সন্তান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ত্রিমুখী শাসনব্যবস্থা থেকে কর্ণফুলীর পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করেন আলাদা উপজেলা। আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক পরিবর্তন করেন তিনি। ১৫ বছর পর এ অঞ্চলের মানুষ কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য শেখ হাসিনাকে কাছে পাবেন। বদলে যাওয়া দুই উপজেলার মানুষ ২৮ অক্টোবর সমাবেশস্থলে গিয়ে শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না বলেও জানান তিনি।

এদিকে টালের নির্মাণের গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর ৯০ দশক থেকে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশের বিশাল জায়গা দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ কিনে রাখে। তখন এসব জায়গার দাম ছিল খুব সস্তা। কিন্ত এখন দাম আকাশছোঁয়া। টানেলকে কেন্দ্র করে চীনের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ পরিকল্পনা করছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগের পরিকল্পনা তাদের।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।