সরকারি কলোনিতে অবৈধ রুম ভাড়ার ব্যবসা- মাসে আয় লক্ষাধিক টাকা!

আগ্রাবাদ পোর্ট হেলথ কলোনিতে সরকারি ভবনের পাশে টিনের ঘর সম্প্রসারণ করে বহিরাগতদের বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় কর্মচারী। এতে একদিকে সরকারি কলোনির স্বাভাবিক পরিবেশের উপর বাড়তি চাপ এবং বৈধ বরাদ্দ পাওয়া পরিবারগুলোর নিরপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে একশ্রেণীর সুবিধাবাদি কর্মচারীরা প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আগ্রাবাদ সরকারি পোর্ট হেলথ কলোনীতে চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্যে নির্মিত ভবনগুলোতে বৈধভাবে ১৭ জনকে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে এখন প্রায় ৪০টির মত পরিবার বসবাস করছে।

৪০টি পরিবারের মধ্যে ১৭ টির বৈধতা থাকলেও বাকি প্রায় ২৩ টি পরিবারের বসবাসের কোন বৈধতা নাই। অবৈধ এই সকল ঘরে রয়েছে রিক্সা চালক এবং ভ্যানচালকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। এছাড়াও প্রথম শ্রেণীর স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জন্য নির্ধারিত আবাসনে ২ জন অফিস সহকারী এবং ১ জন ওয়ার্ড মাস্টারের বসবাসের তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, এই কলোনীতে কোয়ার্টার বরাদ্দ দেওয়ার কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন অফিস সহকারী মাঈনুল হোসেন। তিনি কৌশলে পছন্দের প্রার্থীদেরকে কোয়ার্টেরে ঘর বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। তারপর বৈধ বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশে অবৈধভাবে বহিরাগতদের রুম ভাড়া দেন।
এভাবে প্রায় ২৩টি পরিবারকে রুম ভাড়া দেয়া হয়েছে। সরকারি এসব ঘরে অবৈধভাবে বহিরাগতদের নিকট রুম ভাড়া বাবদ মাসিক ৬ হাজার টাকা নেয়া হয়। এভাবে সরকারি কোয়ার্টারে অবৈধ রুম ভাড়া বাবদ প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে অফিস সহকারি মাঈনুলের বিরুদ্ধে।

কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, কলোনীর নিরাপত্তা প্রহরী সিরাজ এবং পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত মো. আব্দুল ওয়াহাবের নিকট মাসিক মাসোয়ারার বিনিময়ে অবৈধভাবে সরকারি ঘর ভাড়া দেন মঈনুল।

মাঈনুল হোসেনের সাথে এই কাজে আরও আছেন, অফিস সহকারী তারেক, ওমর ফারুক, সরওয়ার, সাইফুল, দেলোয়ার, রাশেদা, ইব্রাহিম, কাদের এবং জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার ফয়েজসহ অন্যান্য পদের কর্মচারীরা।

সরকারি কোয়ার্টারে ভাড়ায় থাকা এসব অবৈধ লোকজন বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তোলেন কলোনীতে বসবাসকারী সরকারি কর্মচারিরা।

জানা যায়, কলোনিতে বৈধভাবে বসবাসকারী বিভিন্ন কর্মচারী-কর্মকর্তারা বহিরাগতদের ঠেকাতে বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিনিয়ত অজানা অচেনা লোকদের সমাগম হওয়ায় কলোনীতে বসবাসকারী সকলের জন্য নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।

কলোনিতে অতিরিক্ত মানুষ ও বাইরের লোকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি মাদক কারবারীদের আনাগোনা, ছিনতাই, অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি করে বসবাস অনুপযোগী করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ কলোনি হয়ে উঠেছে অনিরাপদ ও অস্বাস্থ্যকর।

দুই বছর আগে বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মোতাহার হোসেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। কলোনীতে বসবাসরত বহিরাগতদের বিতাড়ন ও টিনশেডের সম্প্রসারিত অংশ অপসারণ এবং কলোনীর পরিবেশ রক্ষায় তিনি নির্দেশ প্রদান করলেও তা কার্যকর হয়নি।

যার সহযোগিতায় এসব অনিয়মের ঘর তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের সেই প্রধান সহকারী মাঈনুল হোসেন চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, আমি কোন অনিয়মের সাথে যুক্ত নই। অভিযোগ মিথ্যে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবো।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।