৬০ দিনেও শেষ হয়নি চসিক মেয়র রেজাউলের সেই ‘এক মাস’

গত আগস্টের শুরুতে চট্টগ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার পানি নেমে যাওয়ার পর ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্রে স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা, টেলিভিশনের সংবাদ শিরোনাম ছিল—‘এক মাসের মধ্যে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে: মেয়র’।
ওই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছিল—চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুততম সময়ে আমরা নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ নির্ধারণে জরিপ চালিয়ে জেনেছি—নগরীতে ৫০ দশমিক ৭০ কিলোমিটার সড়ক, ২ দশমিক ১৯৯ কিলোমিটার নর্দমা ও ১ দশমিক ৯৯৩ কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাত মেরামতে অন্তত ৫৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আশা করি এক মাসের মধ্যে নগরীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে।’
সেই এক মাস হিসেব করলে ১১ সেপ্টেম্বর ছিল শেষ দিন। আজ ১১ অক্টোবর। নগরীর সড়কগুলোর চেহারা যেন মেয়রের সেই আশ্বাসের কথা শুনে এখনও হাসছে। মেয়র রেজাউলের ঘরের সামনে শুলকবহর। দুই ফ্লাইওভারের মাঝের অংশে যখন গাড়ি চলে তখন যাত্রীরা দোল খান। আর গাড়ির নীচের অংশে কর্ণফুলী নদীর সাম্পানের সূরে ক্যাঁতকুঁত শব্দে চালকদের শঙ্কা জাগে কোন যন্ত্রাংশটি নষ্ট হলো?
কালুরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ১০ নম্বর রুটের বাস চালক আব্দুল হালিম বলেন—সড়কের এই অংশে যখন গাড়ি চলতে তখন গাড়ির নীচ থেকে ক্যাঁতকুঁত শব্দ আসে। আমি ভয়ে থাকি মেশিন (যন্ত্রাংশ) কোনটা নষ্ট হলো? আবার যাত্রীরা নিয়মিত কর্তৃপক্ষকে গালিতো দেয় মাঝে মধ্যে আমাকেও দেয়। যেন সাবধানে গাড়ি চালাই।

৬০ দিনেও শেষ হয়নি চসিক মেয়র রেজাউলের সেই ‘এক মাস’ 1
নগরীর সিআরবি এলাকার ছবি

সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে কিছু অংশে চসিকের অত্যাধুনিক ‘রোড মেনটেইন্যান্স ট্রাক’ দিয়ে কিছু সড়কে সংস্কার করা হয়েছে। তবে সার্সন রোডের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপির বাড়ির সামনেই বেহদাল দশা সড়কের।
এশিয়ান ইউনিভার্সিট ফর ওমেনের চট্টেশ্বরী সড়কে অবস্থিত ক্যাম্পাসের বিপরীতে বেশ কয়েকটি গর্ত দেখা গেছে। সম্প্রতি ওই ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে কাজির দেউড়ী—আসকরদিঘী হয়ে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের গাড়ি বহরের লোকজনকেও বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ক্যাম্পাসের সামনের অংশে সড়কের নুড়িপাথর উঠে দুপাশে স্তুপ হয়ে আছে দীর্ঘ দিন। নুড়ি পাথর উঠে যাওয়াতে সড়ক যেমন এবড়ো থেবড়ো তেমনি ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। বড় যানবাহন ব্রেক করলে পাথরে স্লিপ খাচ্ছে, ছোট যান—মোটরসাইকেলের ঝুঁকি আরও বেশি।
মোটরসাইকেল চালক মোহাম্মদ রুবেল বলেন, প্রবর্তক থেকে কাজির দেউড়ী যাওয়ার জন্য এই সড়কে প্রবেশ করি। কিন্তু ওয়ার সিমিট্রির সামনে নুড়ি পাথর বাইকের চাকায় আটকে ঝুঁকি তৈরি করেছে। সড়কের কাজ করা ছাড়া এই অংশে বাইক চালানো মানেই জীবন ঝুঁকিপূর্ণ।

৬০ দিনেও শেষ হয়নি চসিক মেয়র রেজাউলের সেই ‘এক মাস’ 2
এটি জামালখান চেরাগী মোড়ের কাছাকাছি দৃশ্য। এমন দৃশ্য নগরীর অনেক সড়কেরই

স্টেডিয়াম—সিআরবির সংযোগ স্থলের অবস্থা আরও বেহাল ছিল। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের অংশে সিআরবি থেকে আসা গাড়িগুলো সড়কের ভাঙ্গা অংশ পার হতে গিয়ে এত ধীর গতি হয় যে জ্যাম সিআরবি হাসপাতাল পার হয়ে যায়। আবার কোনো গাড়ি যদি পূর্ব দিক চেপে পার হয় তখন লাভলেইন এবং রেডিসনের দিক থেকে সিআরবি প্রবেশ করতে যাওয়া গাড়ীর জন্য জায়গা সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে দুদিকে জ্যাম পড়ে। ট্রাফিক বিভাগের পীড়াপিড়িতে বুধবার ওই অংশ সংস্কার করা হলেও রেলওয়ে হাসপাতালের সামনের অংশে বেহাল দশা।
মোটরসাইকেল চালক সাইফুদ্দিন টিটো বলেন—সড়ক ভাঙ্গা থাকায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জ্যাম ছিল। সেটা আজ দেখলাম সংস্কার হয়েছে। ভাবছিলাম পুরো সড়ক সংস্কার হয়েছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অফিসের গেট পার হয়ে বাইকের গতি তখন ৩৫ কিলোমিটার। রেলওয়ে হাসপাতালে কাছাকাছি আসতেই দেখি পুরো সড়কেই গর্ত! থামলে পিছনের প্রাইভেট কার এসে আমাকে ধাক্কা দেওয়ার মতো অবস্থা! দিলাম বাইকে গতি বাড়িয়ে, এদিক সেদিক করে এক প্রকার উড়ে ভাঙ্গাগর্ত পার হলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে ভালো রাখতে এতকিছু করছেন কিন্তু বিভিন্ন চেয়ারে যারা বসে আছেন তাদের কারণে সরকারের উন্নয়নের শতভাগ সুফল জনগণ ভোগ করতে পারছে না। এই গর্তগুলো ভরাটের ১২ কোটি টাকায় রোড মেনটেইন্যান্স ট্রাক দিয়েছে সরকার। বৃষ্টি চলাকালেও সড়ক মেরামত করা যায়। কিন্তু সুফল তো আমরা পাচ্ছি না।

এবিষয়ে কথা বলতে চসিক মেয়র রেজাইল করিম চৌধুরীকে ফোন করলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, কাজ চলমান আছে। বিটুমিন পেতে সময় লাগে তাই কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। কতটুকু কাজ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান—৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকিটাও দ্রুত শেষ হবে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উদ্বোধন শেষে চট্টগ্রামের অধিবাসীদের বাড়বে নাগরিক সুবিধা। সংশ্লিষ্টদের দাবী—চসিকের হাতে থাকা সড়কগুলোর বেহালদশার ভোগান্তির যেন দ্রুত সময়ে অবসান ঘটে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।