জুমার দিনের ফজিলত

ইসলামের দৃষ্টিতে পবিত্র জুমা ও জুমাবারের রাত-দিন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে।

জুমার দিনের সওয়াব ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতোই। এ দিন ইসলামী ইতিহাসে বড় বড় ও মহৎ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করা হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুমা- ০৯)।

রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।(ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)।

এক হাদিসে নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম শরিফ , হাদিস নম্বর ৮৫৪)

মহানবী (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে , কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৪০০)

জুমার দিন জুমার নামাজের জন্য যে যত তাড়াতাড়ি মসজিদে আসবে সে তত বেশি সওয়াব পাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন জুমার দিন আসে ফেরেশতারা মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে আগন্তুকদের নাম লিখতে থাকে। যে সবার আগে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি উট সদকা করে। তারপর যে আসে সে ওই ব্যক্তির মতো যে একটি গাভী সদকা করে। তারপর আগমনকারী মুরগি সদকাকারীর মতো। তারপর আগমনকারী একটি ডিম সদকাকারীর মতো। এরপর যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন, তখন ফেরেশতারা তাদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন। (বুখারি : ৮৮২)

নিন্মের হাদিসগুলোতে জুমার দিনের আরও কিছু আমলের কথা চমৎকারভাবে আলোচিত হয়েছে। হযরত আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে। (আবু দাউদ : ৩৪৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, যখন জুমার দিন কোনো ব্যক্তি গোসল করে এবং সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মাখে বা ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হয়, আর দুজনের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি না করে, এরপর সে তার জন্য ধার্যকৃত নামাজ আদায় করে এবং ইমাম খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তার এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত (সগিরা গোনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি : ৮৮৩)

জুমার দিন অন্য দিনের তুলনায় বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়ার কথা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিন আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে। আর এই দিনই (সিঙ্গায়) ফুৎকার হবে এবং এই দিনই সবাই অজ্ঞান হবে। কাজেই তোমরা এই দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। (আবু দাউদ : ১০৮৯)

যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা’ দরুদটি ৮০ বার পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং ৮০ বছর ইবাদত করার সওয়াব লিখে দেবেন। (হাফেজ সাখাবি আল-কওলুল বাদি : ২৮৪)।

জুমার দিন এমন একটি সময় আছে বান্দা ওই সময় যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তা কবুল করে নেন। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, জুমার দিন বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর কাছে যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তাই কবুল করে নেন। তোমরা ওই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান করো। (বুখারি : ৯৩৫)

জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করায় অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত বিশেষ নুর (আলো) দ্বারা আলোকিত করে দেবেন। (বায়হাকি : ৬২০৯)

জুমার দিনের বিশেষ আমলগুলো একনজরে বলতে চাইলে বেরিয়ে আসবে- ১. জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করা। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে সেদিন নখ ও চুলকাটা একটি ভালো কাজ। ২. জুমার নামাজের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৩. মিসওয়াক করা। ৪. গায়ে তেল ব্যবহার করা। ৫. উত্তম পোশাক পরে জুমা আদায় করা। ৬. মুসল্লিরা ইমামের দিকে মুখ করে বসা। ৭. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া। ৮. জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। ৯. বেশি বেশি দোয়া করা। ১০. মুসল্লিদের ফাঁক করে সামনের কাতারে না যাওয়া। ১১. সুযোগ থাকলে দু’রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ নফল আদায় করা। ১২. জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জুমার দিনের এই বিশেষ আমলগুলো পালনের মাধ্যমে এর পরিপূর্ণ ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন।

এমএফ

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।