গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে পালিয়ে গেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রাণকেন্দ্র চাতরী চৌমুহনী বাজারের সড়কে দাপিয়ে বেড়ানো চাঁদাবাজরা। মহাসড়কের ওপর অবৈধ ফুটপাত ও সিএনজি স্টেশনজুড়ে চলতো লাখ টাকার চাঁদাবাজি। ধীরে-ধীরে সবই স্বাভাবিক হতে থাকলেও এখনও বেহাল চাতরী চৌমুহনী বাজারের সড়কে যানজটের ব্যবস্থা।
এদিকে গত ৫ আগস্টের পর থেকে চাতরীর চৌমুহনী বাজারের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি লাঠি ও বাঁশি নিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন একদল ব্যক্তি। নিজেদেরকে প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক দাবি করে তারা সড়কের প্রতিটি দোকান ও গাড়ি থেকে টাকাও নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন গাড়ির চালকরা। তবে এরা কারা জানেন না ট্রাফিক পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ারার কর্ণফুলী টানেল প্রবেশ মুখে চাতরী চৌমুহনী বাজার এলাকার সড়কের দু’পশে গড়ে উঠছে অবৈধ দোকনপাট ও গাড়ির স্টেশন। দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই, এটি সড়ক নাকি কোনো গাড়ির স্টেশন। বিকেল গড়াতেই গাড়ির সংখ্যা বাড়তে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলার যাত্রীদের। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি লাঠি ও বাঁশি নিয়ে কাজ করছেন কয়েকজন যুবক।
প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে কোরিয়ান কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল সার কারখানা, টানেল সার্ভিস এরিয়া, পারকি পর্যটন কর্পোরেশনের শ্রমিকসহ কর্ণফুলী টানেল, কর্ণফুলী, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কক্সাবাজারসহ ঢাকাগামী যাত্রীদের চলাচল। গুরুত্বপূর্ণ বাজারটিতে চাতরী স্কুল রোড, সিইউএফএল সড়কসহ সড়কের দু’পশে গড়ে উঠছে অবৈধ দোকনপাট ও গাড়ির স্টেশন। এসব দোকানপাট ও গাড়ির স্টেশনকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেটও। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা সড়কে লাঠি ও বাঁশি নিয়ে করছে চাঁদাবাজি।
ঈদকে ঘিরে সন্ধ্যার পর প্রতিটি দোকান ও গাড়ির চালকদের কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন গাড়ির চালকরা। এছাড়াও বেপোরোয়া ভাবে এ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কর্ণফুলী ড্রাইডকের স্ক্র্যাস্পবাহী ঝুঁকিপূর্ণ খোলা ট্রাকও। উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে সড়কের এসব অবৈধ দোকানপাট ও গাড়ির স্টেশন উচ্ছেদ করলেও প্রভাবশালীদের প্রভাবে ফের গড়ে উঠে। ট্রাফিক পুলিশের জনবল সংকটের সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চাঁদা আদায় ও অনিয়মের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে উপজেলার ট্রাফিক ব্যবস্থাও।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চালকরা জানান, ঈদকে ঘিরে সড়ক দখল করে দোকানপাট ও স্টেশনকে ঘিরে এখন চলছে নিরবে চাঁদাবাজি। সড়কে প্রতিটি দোকান থেকে একটি প্রভাবশালী মহল সন্ধ্যার পর থেকে টাকা তুলেন। প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত লাইনম্যান দাবি করে এসব ব্যক্তিরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সিএনজি অটোরিকশাসহ অন্য যানবাহনের দায়িত্ব পালনের নামে করছে চাঁদাবাজিও। তাদের যন্ত্রণায় ব্যবসায়ী ও চালকরা অতিষ্ঠ।
পেকুয়া থেকে আসা সিএনজিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, এখানে গাড়ি দাড়াতে লাঠি হাতে এক ব্যক্তিকে প্রতিটি গাড়িকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে কোনো যাত্রী উঠতে এবং গাড়ি দাড়াতে দেয় না। তারা নিজেদের নিয়োগপ্রাপ্ত লাইনম্যানের দায়িত্বে রয়েছে বলে আমাদের পরিচয় দেয়। টাকা দিতে না চাইলে অনেক সময় মারধরও করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী বাজার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাতরীতে সকালে দুইজন এবং বিকেলে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ চারজন কাজ করছেন সড়কে। অনেক সময়ে এখান থেকে অন্য স্থানেও দায়িত্ব পালনের জন্য যেতে হয় তাদের।
সড়কে লাঠি ও বাঁশি যেসব ব্যক্তি কাজ করছেন তাদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কে এরা কারা সেটা আমি জানি না। এটার সম্পর্কে ইউএনও সাহেব জানবেন। এদের বিষয়ে আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, এটা ট্রাফিক পুলিশের দেখার বিষয় সড়কে কারা কাজটি করছে। এমন কাউকে উপজেলা প্রশাসন নিয়োগ দেয়নি। বিষয়টি আমি জেনেছি, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।