সাতকানিয়ায় শিবির ক্যাডার জামশেদ গ্রেপ্তার

সাতকানিয়ায় দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জামশেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। রোববার (১১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নলুয়া ইউনিয়নের হাঙ্গরমুখ বাজারের নবীর দোকান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢেমশ পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বহিরাগত শিবির ক্যাডার জামশেদ, ফাহিমসহ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে পুরো এলাকাকে অশান্ত করে রেখেছে। মারধর ও একাধিক গুলিবর্ষণের ঘটনার তদন্তে নেমে একপর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জামশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগ আছে, জামশেদ কাঞ্চনার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার। পুরো এলাকার মানুষ তার ভয়ে তটস্থ থাকে। জামশেদ পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শিবির ক্যাডার বশরের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত। পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনায় সম্পৃক্ততা রয়েছে জামশেদের। হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু জামশেদ এতোটাই ধূর্ত, তাকে গ্রেপ্তার করা যেত না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জামিন নিয়ে পালিয়ে বেড়াত। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসী জামশেদকে কাঞ্চনা এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছে। এরপর থেকে সন্ত্রাসী সহোদর মিন্টু-কামালের আশ্রয়-পশ্রয়ে নলুয়ায় আত্মগোপন করে। শুধু তাই নয়, জামশেদ তার প্রকৃত নাম গোপন করে বানায় একটি পাসপোর্টও। তার প্রকৃত নাম জামশেদুল করিম চৌধুরী হলেও পাসপোর্ট করা হয়েছে মোহাম্মদ জামশেদ নাম। বাবার নাম আবু বক্কর ও মায়ের নাম সায়রা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানা দেখানো হয়েছে পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা। অথচ তার প্রকৃত মা বাবার নাম ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী ও ছেনু আরা বেগম। ঠিকানা উত্তর কাঞ্চনা চৌধুরী পাড়া।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জামশেদ বড় মাপের শিবির ক্যাডার। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিন্টু ও কামালের আশ্রয়-প্রশ্রয়য়ে থাকেন নলুয়ার পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গায়। সেখানেও বাহিনী গঠনের মাধ্যমে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে জামশেদ। তার কাছে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। গত বছরের ১৩ আগস্ট রাতে নলুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের বাড়িতে জামশেদ ও তার দলবল হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর রাতে মহিউদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি বন্দুক, হকিস্টিক, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায় জামশেদরা। ওই হামলার পর মহিউদ্দিন অনেকটা পঙ্গু জীবনযাপন করছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাতকানিয়া থানায়। সর্বশেষ ২০ জানুযারি রাতে সাতকানিয়া থানা যুবলীগের সাবেক নেতা শাকিলের ঘরে গুলিবর্ষণের ঘটনায়ও সন্দেহের তীর তার দিকে।

এছাড়া জামশেদ সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন পরপর দুবাই যাওয়া আসা করে প্রচুর সোনা পাচার করেছে জামশেদ। অনেকের সোনা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মূলত মিথ্যা তথ্যে প্রতারণার মাধ্যমে বানানো পাসপোর্টে সে সোনা চোরাকারবারের কাজ করতেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাঙ্গরমুখ বাজের সাতকানিয়া থানা পুলিশ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করে। ওই সভায় ওসি ইয়াসির আরাফাত শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী জামশেদের নাম উল্লেখ করে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন।

এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, শিবির ক্যাডার জামশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আইনী পক্রিয়ায় জামশেদকে আদালতের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে রিমান্ডও চাওয়া হবে।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।