সড়ক ও ফুটপাত দখলে চাঁদার হাট, যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, চকরিয়া ও কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসা যাওয়ায় লাখো মানুষ ব্যবহার করেন আনোয়ারা চাতরী হয়ে দক্ষিণে যাওয়ার সড়কটি। কিন্তু সড়ক ও ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী দোকান তৈরি করায় যানজটে প্রতি নিয়ত মোড়টি কার্যত অচল থাকে।
চাতরী থেকে বাঁশখালির দিকে এবং চট্টগ্রাম শহরের দিকের সড়কে যানজট লম্বা হতে হতে তিন-চার কিলোমিটার বিস্তৃত হয়। আর এই অরাজকতার মূলে রয়েছে বিশাল চাঁদার সিন্ডিকেট।

রমজানের শুরু থেকেই ভাসমান বাজারের কারণে সড়ক ও ফুটপাতের চিহ্নমাত্র নেই চট্টগ্রামের আনোয়ারার ব্যস্ততম চাতরী চৌমুহনী বাজারের। কাঁচা বাজার পেরিয়ে সড়ক ও ফুটপাতে বসছে ভাসমান ইফতারসহ বিভিন্ন হাট বাজার। এতে নোংরা হচ্ছে ঔই এলাকার পরিবেশ। ব্যাহত হচ্ছে মানুষ ও যানবাহন চলাচল।

সকালে দখল, মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ আর পরের দিনই আবার দখল। অপরিকল্পিত বাজার বসায় পথ চলায় নেই স্বস্তি। বাড়ছে যানজট, দুর্ঘটনা, বাড়ছে অপরিচ্ছন্নতাও। পথঘাট ক্রমেই হচ্ছে হাঁটাচলার অনুপযোগী। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাতেও ঠাঁই হচ্ছে বারবার। আর এসব সমস্যার মূলে চাতরীর ফুটপাত বাণিজ্য।

চাতরীবাসীর দুঃখ একদিনের নয়, প্রতিদিনের। ফুটপাতের দখল করে ভাসমান দোকানের পাশাপাশি কেউ কেউ রেস্টুরেন্টের সিঁড়িও স্থাপন করেছেন। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসন ইতোপূর্বে বেশি কয়েকটি অভিযানও পরিচালনা করেছে। অভিযানের পর ফিসে আসে আগের চিত্রে। অভিযোগ উঠছে- এসবের পিছনে রয়েছেন চাঁদাবাজি। রমজান এলে সড়ক ও ফুটপাত দখলের দৌরাত্ম বেড়ে যায়।

দোকানিরা জানান, সড়ক ও ফুটপাত দখল করে প্রায় শতাধিক ভাসমান দোকান আছে। প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। চাঁদার হার গড়ে ১০০ টাকা করে হলে দিনে ১০ হাজার টাকা চাঁদা ওঠে। চাঁদার এই টাকা বাজার ইজারাদার ও স্থানীয় নেতা-কর্মীর পকেটে এবং চাঁদা তোলার কাজে নিয়োজিত লাইনম্যান ও তাঁদের সহযোগীরা ভাগ করে নেন।

সড়ক ও ফুটপাত দখলে চাঁদার হাট, যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ 1

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চাতরী ইউনিয়ন বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইট থেকে সিইউএফএল সড়ক চাতরী কাঁচা বাজার পর্যন্ত প্রায় ৪০ ফুট প্রশন্ত সড়কের উভয় পাশেই শতাধিক দোকান। এই দোকানগুলোর কারণে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সড়কের উল্টোদিকের ফুটপাতের পুরোটাই অবৈধ দখলে। পথচারীদের চলাচলের জন্য কেনো জায়গা রাখা হয়নি। এছাড়াও সড়কের মধ্যে গাড়ি পার্কিং করে রাখায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে রেখেছে। এ যানজটের কারণে ভোগান্তির মুখে পড়েন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, সিইউএফএল, কাফকো, বঙ্গবন্ধু টানেল, কেইপিজেডসহ সরকারি বেসকারি প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।

স্থানীয়দের দাবী, ফুটপাত দখলে অনেকের স্বার্থ জড়িত। তাদের মদদেই সড়ক ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ পান দোকানিরা। অনেকে ফুটপাত দখলে রেখে করছেন ব্যবসা আবার কেউ কেউ সিঁড়িও স্থাপন করেছেন ফুটপাতে। তাছাড়া সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ দোকান গড়ে তোলায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, কেইপিজেডের শ্রমিক ও পথচারীদের হাটতে হচ্ছে মূল সড়কে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

এতে আটকে পড়ে জরুরী ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও এ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীও। যার ফলে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন পথচারী ও যাত্রী সাধারণ।

এছাড়া রাস্তার পাশ ঘেঁষে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। ট্রাফিক বক্সের বাইরের চিত্র আরও করুণ। পাশেই ময়লার ড্রেন। সেখানে মশার নিরাপদ আবাস। বক্সের নিরাপত্তায় নেই কোনো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও (সিসিটিভি)। কার্যত ভেতর-বাইরে অরক্ষিত পুলিশ ট্রাফিক বক্স। যেন দেখার কেউ নেই।

জানতে চাইলে আনোয়ারা ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ হাফিজুর রহমান বলেন, চাতরী চৌমুহনী বাজারে সড়ক ও ফুটপাত দখলে রেখে যারা ব্যবসা বানিজ্য করে যানজট সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর হাসান চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে অনেকেই সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বাজার স্থাপন নিয়ে অভিযোগ করেছেন। শীঘ্রই অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখল মুক্ত করা হবে।

আনোয়ারা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, সড়ক দখল করে যারা অবৈধভাবে দোকানপাট গড়ে তুলেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সড়ক ও ফুটপাতে ভাসমান ইফতারি বিক্রির বিরুদ্ধে এবং সড়ক ফুটপাত উচ্ছেদ অভিযানও করা হবে শীঘ্রই।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।