আয়াতের খুনি শনাক্ত করে আরিয়ান ও তরী হত্যা মামলায় আশা দেখাচ্ছে পিবিআই

চট্টগ্রামে শিশু সুরমা, বর্ষা ও আয়াতের খুনিরা খুব দ্রুত শনাক্ত হলেও অজানা রয়ে গেছে শিশু আরিয়ান এবং তরী হত্যার খুনিদের পরিচয়। আরিয়ান হত্যায় দুই বছর সময় গড়ালেও এখনো হয়নি কোনো কূলকিনারা। তরী হত্যাকাণ্ডেরও হয়ে গেছে দেড় বছর। এই দুই হত্যা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। তবে সম্প্রতি শিশু আয়াত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে আরিয়ান ও তরী হত্যা মামলায় আশা দেখাচ্ছে পিবিআই।

গত বছর ২৭ জুন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার বাহির সিগন্যাল মোড়ের নিজ বাসায় পাঁচ বছরের শিশু নুসরাত জাহান তরীকে রেখে প্রতিদিনের মতো কর্মস্থলে যান মা ফাতেমা বেগম। দুপুরে ফিরে খাটের নিচে সন্তানের লাশ পান ফাতেমা।

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ ইমন নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছিলো। কিন্তু পিবিআই তদন্তে ডিএনএ প্রোফাইল করে। ডিএনএ প্রোফাইলে ইমনের ডিএনএ’র সাথে না মেলায় পুলিশের তদন্তে নেয় ভিন্ন মোড়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক (প্রশাসন) আবু জাফর মো. ওমর ফারুক বলেন, তরী হত্যা মামলা আমরা ছায়া তদন্ত করছি। তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করছি একটি সফল সমাপ্তিতে শিগগিরই আমরা পৌঁছাবো।

অপর দিকে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার শাপলা আবাসিক এলাকার বায়তুল হুদা হাজী সুফিয়ান সাবেরা মাদ্রাসা গলি থেকে নিখোঁজ হয় ৬ বছরের শিশু মেহেরাজ ইসলাম আরিয়ান। ওই রাতেই তার মা মারজান আক্তার পাহাড়তলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে হালিশহর থানা পুলিশ দারুল ফুরকান চট্টগ্রাম নামের এক মাদ্রাসার সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা প্লটে জমে থাকা পানি থেকে আরিয়ানের লাশ উদ্ধার করে। নিখোঁজ হওয়ার স্থান পাহাড়তলী থানা হলেও শিশুটির লাশ পাওয়া যায় হালিশহর থানা এলাকা থেকে। থানা দুটি হলেও স্থান দুটির দূরত্ব বড়জোর দুই’শ গজ।

আরিয়ানের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। তার পায়ের জুতোগুলো পায়েই ছিল। তবে ভিসেরা রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি নেগেটিভ ছিল। তদন্ত সম্পৃক্তদের ধারণা, আরিয়ানকে তার নানার বাসার গলি থেকে ফুসলিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ বলেন, মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সম্ভাব্য সবগুলো বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত এগুচ্ছে। আশা করছি খুনিকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারবো।

অপরদিকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বন্দর থানা পুলিশ পোর্ট কলোনীর একটি পরিত্যাক্ত ভবন থেকে শিশু সুরমার মরদেহ উদ্ধার করে। ১৩ অক্টোবর রাতে শিশু সুরমার খুনের দায়ে টিম বন্দর থানা রিকশাচালক ওসমান হারুন মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে। মিন্টু বিরিয়ানির লোভ দেখিয়ে শিশু সুরমাকে ধর্ষণ ও খুন করেছিল বলে স্বীকার করে।

গত ২৪ অক্টোবর বাসা থেকে ২০ টাকা নিয়ে বিস্কুট কিনতে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেনি নগরীর জামালখানস্থ কুসুমকুমারী স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজানা হক বর্ষা। তিনদিন পর শিকদার হোটেলের পিছনের নালা থেকে শিশু বর্ষার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রভাবশালীরা বর্ষার খুনের ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করা চেষ্টা করলেও তৎকালীন এসি কোতোয়ালী মুজাহিদুল ইসলামের বিচক্ষণতায় টিম কোতোয়ালীর হাতে ওই রাতেই গ্রেপ্তার হয় খুনি লক্ষণ।

পরপর দুই মাসে দুটি শিশুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশে তুমুল ঝড় তুলে ইপিজেড থানার আলিনা ইসলাম আয়াত অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড। আয়াতকে ফুসলিয়ে নিয়ে তার দেহ ৬ টুকরো করে খুনি আবির আলী
১৫ নভেম্বর ইপিজেড থানার বন্দরটিলার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা। ইপিজিড থানার পাশাপাশি তদন্তে নামে পিবিআই।
পিবিআই গত ২৪ নভেম্বর রাতে আবিরকে আটকের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি সপ্তাহব্যাপী সাগরপাড়ে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে শিশু আয়াতের শরীর বিভিন্ন অংশ।

শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত হত্যা রহস্য উন্মোচন এবং খুনিকে আইনের আওতায় আনতে পারায় পিবিআইয়ের প্রতি আস্থার পারদ বেড়েছে আরও এক ধাপ। তাই সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা দেবশিশু আরিয়ান ও তরী হত্যার রহস্যও শিগগির উন্মোচন হবে। দোষীরা আসবে আইনের আওতায়।

তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার চট্টগ্রাম খবরকে বলেন, পিবিআই যে কোনো মামলা ত্রুটিমুক্ত তদন্ত করতে সব সময় সচেষ্ট। শিশু আরিয়ান ও তরী হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমাদের টিম কাজ করছে। ভাগ্য সহায় হলে আমরা দোষীদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাবো।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।