মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা, বুথে থাকছে না সিসি ক্যামরা

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাচন

কর্ণফুলী উপজেলায় আজ সোমবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। তাই শেষ দিনে আদা জল খেয়ে মাঠে নেমেছে প্রার্থীরা। জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বড়উঠান, শিকলবাহা, জুলধা, চরলক্ষ্যা ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের অলিগলিতে সর্বত্র ঝুলছে প্রার্থীদের পোস্টার। সেই সঙ্গে দিনরাত এক করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা। তারা দলীয় পরিচয়ের পাশাপাশি সামনে তুলে আনছেন নিজেদের পরিচিতিও।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৭২ জন। উপজেলা গঠনের পর দ্বিতীয় বারের মত ২ নভেম্বর নির্বাচনে ৪৫টি কেন্দ্রের ৩২০টি বুথে ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে ভোট গ্রহণ। তবে বুথে থাকছে না কোনো সিসি ক্যামরা।

বড়উঠান ইউনিয়নের তরুণ ভোটার মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম চালানোর জন্য দক্ষ ও মেধাবী লোকের প্রয়োজন। নতুন উপজেলার নতুন নতুন দপ্তরের প্রয়োজন। যাতে করে আমরা সবধরণে সেবাগুলো এক স্থান থেকেই পেতে পারি। এগুলোর জন্য দক্ষ হিসেবে তরুণ প্রজন্মের ভোটার ও বৃদ্ধরা পুরাতনের উভর ভরসা রেখেছে। উপজেলার উন্নয়নের জন্য আমাদের ভোটটা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দিব।

সোমবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ভাইস চেয়ারম্যান ও পুরাতন চেয়ারম্যানের উপর ভরসাটা বেশি প্রায় এলাকার মানুষদের। সাধারণ ভোটারা বলেন, কিছুই ছিলোনা এই উপজেলায়, বিগত ৫ বছরের পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। হচ্ছে নতুন উপজেলা কমপ্লেক্সসহ গ্রাম হয়েছে শহরে। সেসব প্রতিনিধি দেশের ও দশের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন তাদের পক্ষে বেশি সমর্থক এবার ভোটে। দক্ষ, মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দিবেন। যাতে এলাকার উন্নয়ন হয়। তবে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে এবার নতুনদের সমর্থকও রয়েছে সাড়া জাগানো।

নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার প্রার্থীরা ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের ফুলঝুরি। প্রার্থীদের প্রচারণা আর কৌশল ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে প্রাণচাঞ্চল্য। প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ঘরে বাইরে সবখানে এখন ভোটের আমেজ।

নির্বাচনে ফুটবল প্রতীকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন শিকলবাহার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম চৌধুরী বকুলের কন্যা ডা. ফারহানা মমতাজ। তিনি বলেন, জনগণের পাশে থেকে সেবা করতে চাই। আমার মরহুম পিতা সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম বকুলের অপূর্ণ স্বপ্ন ও সেবার হাত প্রসারিত করতে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। আমি সব সময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকি। নারীদের ভাগ্য উন্নয়নের কাজ করবো। অসহায় দরিদ্র যারা অর্থের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না এমন অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি অনেক আগে থেকে। নির্বাচিত হয়ে মানুষের সুখ দুঃখের অংশীদার হতে চাই। ইনশাআল্লাহ ২ নভেম্বর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবো।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক চৌধুরী বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনও চলছে উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ড। এসব অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে। সাধারণ ভোটার আমার পক্ষে আছে। নির্বাচিত হলে উপজেলাবাসীকে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নসহ নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবো।

উন্নত নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন আধুনিক উপজেলা গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি জানান, সংসদে আমাদের অভিভাবক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি মহোদয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এখন শুধু সঠিক কাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা। শেষদিন পর্যন্ত জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে কর্ণফুলীকে আধুনিক শহর বানাতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ৬ প্রার্থী। তারা হলেন, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী (নৌকা), বিদ্রোহী মোহাম্মদ আলী (আনারস), ভাইস চেয়ারম্যান পদে জুলধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যাংকার আমির আহমদ (চশমা), যুবলীগের সহ সভাপতি মো. মহিউদ্দিন মুরাদ (উড়োজাহাজ), মো. আবদুল হালিম (তালা), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিকলবাহার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম বকুলের কন্যা ডাক্তার ফারহানা মমতাজ (ফুটবল), মোমেনা আক্তার (কলস), বানাজা বেগম (হাঁস) এবং রানু আকতার (বৈদ্যুতিক পাখা) মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনে যেকোনো বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ সর্বদা মাঠে রয়েছে। এদিকে প্রার্থীরা যাতে আচরণবিধি লঙ্খন না করতে পারেন, সেদিকে নজরদারি রাখছে প্রশাসন। এমনটায় জানিয়েছেন নিযুক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী।

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।